বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

গোয়ালন্দের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছেন ডিপিইও তৌহিদুল ইসলাম

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশের মহকুমার প্রাচীনত্বে গোয়ালন্দ অন্যতম। বিবর্তনের ইতিহাসে সমসাময়িক অন্য মহকুমাগুলো জেলায় রূপ নিলেও গোয়ালন্দের নাম সে তালিকায় নেই। বর্তমানে গোয়ালন্দ রাজবাড়ী জেলার একটি উপজেলা।
ভৌগোলিকভাবে গোয়ালন্দ রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হলেও জেলার অন্য উপজেলার জনসাধারণের তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো সব সময়ই নিজের অজান্তে অসচেতন থেকে যায়।
এই অসচেতন মানুষগুলো বারবার শিক্ষার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে। এ জন্য কেবল নিজেরাই দায়ী নয়, পাশাপাশি ভৌগলিক কারণও রয়েছে। আয়তনে ক্ষুদ্র এই উপজেলার পাশ দিয়ে চলে গেছে ভয়াল তৃষ্ণার্ত পদ্মা নদী। দেশের বৃহত্তম গণিকালয় এবং অন্যতম বৃহত্তম নৌ-ঘাট (দৌলতদিয়া) অবস্থিত এই উপজেলায়। ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত এই উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের (দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও উজানচর) জনসাধারণ প্রতি বছর সর্বনাশা পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়। এই ভাঙ্গনের শিকার মানুষগুলোর আশ্রয় হয় পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন নতুন চরে কিংবা সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে। গৃহহারা, দৈন্য-দশাগ্রস্ত এই পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েরা তখন বিদ্যালয়ে যাওয়া বাদ দিয়ে চলে যায় দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে অপেক্ষমান বাস ও নদীতে চলমান লঞ্চ/ফেরীতে ভ্রাম্যমান হকার ও কুলির কাজ করতে।
অপরদিকে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম গণিকালয়ে রয়েছে ৩শতাধিক বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশু। সমাজপতি কিংবা কথিত শিক্ষিতজন সকলেই এক সময় গণিকালয়ের বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুকে সমাজের অন্য শিশুদের সঙ্গে একত্রে লেখাপড়া করানো গর্হিত কাজ বলে মনে করতো। নদী ভাঙ্গনের শিকার অসচ্ছল পরিবারগুলোর অসহায় শিশুগুলো অভাবের তাড়নায় শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়ে অবজ্ঞা আর লাঞ্চনার শিকার হয়। বিভিন্ন সময় সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কিংবা স্থানীয় এনজিও এ সকল বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করলেও অভিভাবকদের অসচেতনতা আর দারিদ্রতা এই সকল শিশুকে আবারও নিয়ে গেছে অবজ্ঞা আর লাঞ্চনার সেই কর্মযজ্ঞে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার(ডিপিইও) মোঃ তৌহিদুল ইসলাম হিসেবে ২০১৫ সালে রাজবাড়ী জেলায় যোগদান করে জানতে পারেন শিক্ষার হার, ঝরে পড়ার হার রোধ এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার মাপকাঠিতে অত্র জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে তুলনামূলকভাবে গোয়ালন্দ উপজেলা সমঅগ্রগতিসম্পন্ন হতে পারেনি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে তিনি গোয়ালন্দ উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবচিত্র সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা লাভ করেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, প্রতি বছর পদ্মা নদীর করাল গ্রাসে বহু বসতবাড়ী ও ফসলী জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর করতে হচ্ছে। ৎ
তিনি উপলব্ধি করলেন, প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক কারণের পাশাপাশি অভিভাবকদের অসচেতনতাই বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুদের ভর্তি ও ঝরে পড়ার মূল কারণ। এ জন্য তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার যে সকল বিদ্যালয়গুলোর ক্যাচমেন্ট এলাকায় শ্রমজীবী শিশু, পথ শিশু, যৌনকর্মীর শিশু, নদীর চরের শিশু এবং চরম দরিদ্র ঘরের শিশু রয়েছে সে সকল বিদ্যালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন ও মা সমাবেশ করেন এবং প্রত্যেক শিশুর চাহিদা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেন।
২০১৫ সালে সর্বনাশা পদ্মা নদীর ছোবলে গোয়ালন্দ উপজেলার ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর করতে হয়। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এসএমসি’র সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বিদ্যালয় স্থানান্তরের কাজ করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সফল উদ্যোগের ফলে স্থানান্তরিত পরিবার ও ২টি আবাসন প্রকল্প এবং ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঝরে পড়া এবং বিদ্যালয় গমনোপযোগী শতভাগ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত লেখাপড়া করছে। ফেরী ঘাটে ও পদ্মার চরে শিশু শ্রমে নিয়োজিত ঝরে পড়া শিশুদের অভিভাবক, দৌলতদিয়া ঘাটে অবস্থিত গণিকালয়ের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক, এসএমসি এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে একীভূত শিক্ষা সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। পৃথকভাবে কথা বলেন শ্রমজীবী শিশুদের অভিভাবক এবং গণিকালয়ে বসবাসকারী শিশুদের মায়েদের সঙ্গে। গণিকালয়ে কর্মরত এনজিও কর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। ফলশ্রুতিতে যৌনকর্মীর বিদ্যালয় গমনযোগ্য শিশু সুবিধামত নিকটবর্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। বর্তমানে গণিকালয়ের নিকটবর্তী একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েই যৌনকর্মীদের ২৬৭জন শিশু লেখাপড়া করছে। এ ছাড়াও শিশুদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে মিড-ডে মিল চালু, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে টিফিন বক্স বিতরণ ও দুপুরে খাবার প্রদানের জন্য অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধকরণ, বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার সাথে পাঠদানে নেয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ।
গোয়ালন্দ উপজেলার ফেরী ঘাট, নদী তীরবর্তী এলাকা এবং গণিকালয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় শিশুদের শতভাগ বিদ্যালয়ে ভর্তি, তাদের ধরে রাখা এবং সর্বোপরি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলামের অবদান উপজেলার জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক, সরকারী কর্মকর্তা এবং এনজিও প্রতিনিধিদের নিকট ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলার পাশাপাশি জেলার সর্বত্রই প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!