বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

স্মৃতিতে অম্লান রাজবাড়ীর সাবেক প্রথম নারী জেলা প্রশাসক রাজিয়া বেগমের ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

॥মোঃ মকবুল হোসেন খান॥ আজ ৩১শে জুলাই রাজবাড়ীর সাবেক প্রথম নারী জেলা প্রশাসক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব রাজিয়া বেগম,এনডিসি’র ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী।
২০১০ সালের আজকের এই দিনে সকাল সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা-আরিচা জাতীয় মহাসড়কের মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া মোড়ে ঢাকা-আরিচা জাতীয় মহাসড়কে মানিকগঞ্জে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর সংবাদ আমাদেরকে গভীরভাবে শোকাভিভূত করে।
গত ৩১শে জুলাই-২০১০ তারিখে গোপালগঞ্জে একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে যাবার প্রাক্কালে তিনি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা-আরিচা জাতীয় মহাসড়কের মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া মোড়ে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন(ইন্নানিল্ল¬াহি অ-ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। পরম শ্রদ্ধার রাজিয়া বেগম, এনডিসি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা জেলা প্রশাসক হিসেবে রাজবাড়ী জেলায় গত ২৮শে মার্চ-২০০১ তারিখে যোগদান করে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ২৫শে এপ্রিল ২০০২ তারিখে রাজবাড়ী থেকে বদলী হয়ে যান। রাজবাড়ী জেলায় এক বছরের অধিক সময় অবস্থান করে সবার মনে তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন।
প্রশাসনিক ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন এবং সদালাপী এ কর্মকর্তা ১৯৮২ সালের বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের রেগুলার ব্যাচে ১৯/১২/১৯৮৩ তারিখে সর্বপ্রথম নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। এরপর সেখানেই তিনি ২/১/১৯৮৬ থেকে ১৬/১২/১৯৮৮ পর্যন্ত রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর পদে চাকুরী করে সিলেট জেলায় বদলী হয়ে যান। সেখানে ১৭/১২/১৯৮৮ থেকে ১৯/৪/১৯৯৪ পর্যন্ত জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিলেট সদর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯/১০/১৯৯৪ হতে ৫/১০/১৯৯৬ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ৭/১০/১৯৯৬ তারিখে গাজীপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। গাজীপুরের পরে ২৭/৮/১৯৯৮ থেকে ১৪/১/২০০১ পর্যন্ত বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পদে, ১৫/১/২০০১ থেকে ১০/৩/২০০১ পর্যন্ত জনপ্রশাসন(সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে এবং ১১/৩/২০০১ হতে ২৭/৩/২০০১ পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে অতিরিক্ত পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করে গত ২৮/৩/২০০১ তারিখে রাজবাড়ী জেলায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। রাজবাড়ীতে সাফল্যজনকভাবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি ২/৫/২০০২ থেকে ৩০/১১/২০০২ পর্যন্ত বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে, ১/১২/২০০২ থেকে ২০/১২/২০০২ পর্যন্ত জনপ্রশাসন(সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে, ২১/১২/২০০২ থেকে ১৮/৯/২০০৪ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে, ১৯/৯/২০০৪ থেকে ৪/৩/২০০৫ পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে, ৫/৩/২০০৫ থেকে ১৬/৩/২০০৫ পর্যন্ত জনপ্রশাসন(সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব পদে, ১৭/৩/২০০৫ থেকে ৪/১/২০০৬ পর্যন্ত রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক পদে, ৮/১/২০০৬ থেকে ১২/১১/২০০৬ পর্যন্ত জনপ্রশাসন(সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব পদে, ১২/১২/২০০৬ থেকে ২৬/১/২০০৯ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব পদে, ২৭/১/২০০৯ থেকে ২৫/৪/২০০৯ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে এবং ২৬/৪/২০০৯ থেকে ২৯/১২/২০০৯ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সফলভাবে অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের পর গত ৩০/১২/২০০৯ তারিখ থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রয়াত রাজিয়া বেগম ৩০শে নভেম্বর ১৯৫৮ সালে পিতার চাকুরীস্থল জামালপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার বদলীর চাকুরীর সুবাদে তাঁর শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে। তবে লেখাপড়া শুরু ফেনীতে। ১৯৭৪ সালে কুমিল্লায় এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকুরীজীবী পিতার চাকুরীর সুবাধে তিনি পিতার সাথে চট্রগ্রামে চলে আসেন। চট্রগ্রাম সিটি কলেজ থেকে তিনি ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮০ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে বি.এ(অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে এম.এ সম্পন্ন করে ১৯৮২ সালের বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারের রেগুলার ব্যাচে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন ।
নোয়াখালী জেলায় চাকুরী করার সুবাধে নোয়াখালী নিবাসী ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ১৯৯৪ সালে সরকারী ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাজ্য এবং ২০০৭ সালে সিংগাপুর সফর করেন। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। ২০০৬ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সাফল্যের সাথে সমাপন করায় সরকার তাকে এনডিসি উপাধিতে ভূষিত করেন ।
রাজবাড়ী জেলায় জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। অত্যন্ত দৃঢ়চেতা এ কর্মকর্তা অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করেননি। রাজবাড়ী জেলায় কর্মকালীন সময়ে কতিপয় দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারী এবং যার যেখানে থাকার কথা নয় এমন কয়েকজন কর্মচারীকে অন্যত্র বদলী করলে তারা তাকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করে। কিন্তু এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে অত্যন্ত দূঢ়তার সাথে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সকল শ্রেণীর কর্মচারীদের সহযোগিতায় তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। উন্নয়ন প্রশাসন বিনির্মাণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সময়ে অসময়ে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন সরেজমিনে তদারকি করেছেন। কোন দুর্ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন এবং সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনিই সর্বপ্রথম কম্পিউটার ব্যবহারের প্রচলন শুরু করেন। তাঁর কর্মকালীন সময়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কয়েকটি কম্পিউটার সংগৃহীত হয়েছিল।
রাজবাড়ী জেলায় সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলন ‘‘জাগরিত রাজবাড়ী’’ কর্মসূচিতে তিনি অসাধারণ প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন। এ কর্মসূচি চলাকালীন তিনি গ্রামে গঞ্জে ছুটে বেরিয়েছেন, পাঠদান কার্যক্রম সরেজমিনে তদারকি করেছেন। কোন বয়স্ক শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে না আসলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বাড়ীতে গিয়ে তাঁকে সাক্ষরতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছেন-উৎসাহিত করেছেন। জাগরিত রাজবাড়ী কর্মসূচির পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করেন। নির্ধারিত প্রমাপের বাইরে তিনি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দর্শন/পরিদর্শন করেছেন, বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
তিনি কখনই অধীনস্থদের উপর মারমুখী বা প্রভুসুলভ আচরণ করেননি। কর্মচারী বান্ধব এ কর্মকর্তা অত্যন্ত সৌহাদ্য পরিবেশে দাপ্তরিক কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা করেছেন। হাতে গোনা কতিপয় কর্মচারী তাঁকে অসহযোগিতা করলেও তাদের প্রতি তিনি কখনই বিরূপ মনোভাব পোষণ করেননি। বরং অসীম ক্ষমায় তাদের পুনর্বাসিত করে গেছেন ।
রাজবাড়ীর সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, আর্থ-সামাজিক ও ক্রীড়াঙ্গণকে তিনি বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমি, টাউন হল, টেনিস ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, রাজবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, মহিলা ক্লাবসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে তিনি উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সাফল্যজনক অবদান রেখে গেছেন এবং সবাইকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। বলাই বাইল্য, রাজবাড়ীতে রেলওয়ে ময়দানে ঈদের বিশাল জামাত হয়। সে জামাতে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারতো না। জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০০১ সালে থেকে তিনিই প্রথম ঈদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। এতে রাজবাড়ীর সকলে খুশী হয়েছিল। জেলার নারীরা পুরো ব্যাপারটিকে তাঁদের স্বীকৃতির একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করে। ধর্মীয় বিধানমতে, এজন্য কেয়ামত পর্যন্ত এর সওয়াব তিনি ভোগ করবেন এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
চাকুরী জীবনে তিনি ছিলেন একজন সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা । যে কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত প্রদানে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত । যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার অভিজ্ঞতা ছিল প্রশ্নাতীত। রাজবাড়ীতে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে শক্ত হাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সে সময়ে তিনি বিচার কার্যক্রমকে রেখেছিলেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে। জেলার কোথাও গুরুতর অপরাধ বা রাজনৈতিক সংশ্লেষযুক্ত স্পর্শকাতর ঘটনা সংঘটিত হলে তিনি সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে অকুস্থলে ছুটে গিয়েছেন এবং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করেছেন। অপরাধ প্রবণতা রোধকল্পে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে ব্যাপক উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ে ফৌজদারী মামলা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসী সম্মেলন করে মামলা নিস্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে তিনি বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সমাজের নিগৃহিত ও অবহেলিত যৌনপল্লীর শিশুদের পুনর্বাসনে এনজিও পায়াক্টসহ দৌলতদিয়া সেফ হোম নিয়মিত পরিদর্শন করে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন। রাজস্ব প্রশাসন চালাতে গিয়ে তিনি কালেক্টর হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, খাস জমি ব্যবস্থাপনা, অর্পিত/পরিত্যক্ত সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আবাসন ব্যবস্থা এবং ভূমি অফিসসমূহের জনসাধারণের সেবা প্রদান কার্যক্রম জোরদারকরণ ইত্যাদি কাজে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন। সময় পেলেই অতর্কিতে হাজির হতেন তহশিল অফিস তথা ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহে। এ সকল অফিসে আগত জনসাধারণের সাথে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি তাদের কোন হয়রানি হচ্ছে কিনা এতদবিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে সরকারের কর্তৃত্ব ও অস্তিত্ব বহনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন প্রভাবশালী অথবা দুস্কৃতিকারীরা চাপ প্রয়োগ করে কিনা তারও খোঁজখবর রাখতেন । আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষে তিনি পাবনাসহ অন্যান্য জেলায় ছুঁটে গিয়েছেন, সভা করেছেন এবং সীমানা বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে রাজবাড়ীতে কাজ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব হ্রাস, মজুতদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান, সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়মিত বৈঠক, বাজারমূল্যের উপর নিয়মিত মনিটরিং করেছেন। জেলার কৃষি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সার ও বীজের সুষ্ঠু বিতরণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিতরণ, মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়ন, জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পরিবেশ ও বনসম্পদ তথা পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং এ ধরণের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন ।
এক কথায় বলা যায়-রাজবাড়ীবাসীর সার্বিক কল্যাণে জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সবার হƒদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। সরকারের উচ্চ পদে আসীন হলেও তিনি শত ব্যস্ততার মধ্যে রাজবাড়ী থেকে কেউ তাঁর কাছে গেলে সময় বের করে তাঁদের কথা শুনেছেন এবং সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন-রাজবাড়ীর সাথে আমৃত্যু যোগাযোগ রেখেছেন। সেই পরম শ্রদ্ধার মানুষ মমতাময়ী রাজিয়া বেগম আজ আর নেই একথা বিশ্বাস করাই যায়না। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ধর্মপরায়ন এ কর্মকর্তা পরম করুণাময়ের সান্নিধ্যে চলে গেছেন একথা ভাবতেও কষ্ট হয়। রাজবাড়ীর সাবেক জেলা প্রশাসক রাজিয়া বেগম- আমাদের হƒদয়ে আজও বিরাজমান। সদালাপী এ কর্মকর্তা চিরবিদায় নিলেও সবার আত্মার আত্মীয় হিসেবে চির অম্লান থাকবেন। আমরা তাঁকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণে রাখবো-হƒদয়ে তাঁর স্মৃতি ধারণ করবো চিরদিন। তাঁর ৮ম মৃত্যু বার্ষিকীতে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি-‘‘তাকে জান্নাতবাসী করুণ”। লেখক ঃ মোঃ মকবুল হোসেন খান, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের গোপনীয় সহকারী(সি.এ) পদে কর্মরত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!