## রওশন আরা পারভেজ ## আমাদের দেশ প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার একটি জনবহুল দেশ। এই ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তিই একজন আরেকজন থেকে আলাদা। কারো সাথে কারোর কোন মিল নেই। আকার, আকৃতি, বর্ণ, বৈশিষ্ট্য, কর্মদক্ষতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ভিন্নতা।
কারো হাত নেই, কারো হাত আছেতো পা নেই, কারো আবার বুদ্ধি কম, কেউ আবার নিজের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে সেখানেই তার বসবাস। অর্থাৎ আমাদের থেকে এরা কিছুটা হলেও আলাদা, কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। সমাজে এদেরকে সুবিধা বঞ্চিত বা প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে। যাদেরকে আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, তারাও মানুষ। তাদেরও যে রয়েছে বাঁচার অধিকার, রয়েছে শিক্ষার অধিকার। নানা ধরনের কর্মমুখী শিক্ষাদানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলে সম্পদে পরিণত করতে হবে।
বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ প্রতিবন্ধী রয়েছে। এদেশের আইনে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ ধরনের প্রতিবন্ধীতাকে বলা হয়ে থাকে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বা ¯œায়ু বিকাশ জনিত সমস্যা। এর মধ্যে অটিজমও রয়েছে। অটিজমও এক ধরণের প্রতিবন্ধিতা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ড. সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির অগ্রনায়ক। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২রা এপ্রিল বিশ্বব্যাপী অটিজম দিবস পালিত হয়ে থাকে। অটিস্টিক শিশু বা প্রতিবন্ধী যেভাবেই বলা হোক না কেন প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশুরই রয়েছে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার, রয়েছে শিক্ষা লাভের অধিকার। তাদেকে উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায় তাহলে তাদের লাইফ স্কিল বা জীবন দক্ষতা অনেকখানি বাড়ানো সম্ভব হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার জন্য কিছু স্পেশালাইজড স্কুল রয়েছে যেখানে তাদের প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এই সব স্কুলে তাদের কিছু ভোকেশনাল ট্রেনিংও দেয়া হয়। কেননা, কিছু প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে যারা খুব ভালো মালা গাঁথতে পারে, কেউ ভালো কম্পিউটার টাইপ করতে জানে আবার কেউবা চিত্রাঙ্কনে খুব ভালো। এসব শিশুদের যদি তাদের কর্মক্ষমতা অনুযায়ী ভোকেশনাল ট্রেনিং দেয়া যায় তাহলে তাদেরকে আর অন্যের উপর বোঝা হয়ে থাকতে হবে না। অর্থনৈতিকভাবে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারটা উপলব্ধি করে ঘঅঅঘউ বা ন্যাশনাল একাডেমী ফর অটিজম এন্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকার পূর্বাচলে ৩.৩৩ একর জমির উপর একটি জাতীয় একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা প্রতিবন্ধী শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য আনন্দের সংবাদ। তবে এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। লেখিকা ঃ প্রভাষক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজ।