বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

করোনা ও আমরা

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ মে, ২০২০

॥মোঃ মনজুর হোসেন॥ সভ্যতার সূচনা থেকেই একটা প্রবাদ মুখে মুখে প্রচলিত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে যেতে হবে। ধ্যানে জ্ঞানে যারা শীর্ষে সেই চীন দেশের উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় কথিত বহু বছর আগে আবিস্কৃত একটি ভাইরাস যার নাম করোনা(পোশাকি নাম-Covid-19)। এই তো সেদিনকার কথা। ক্ষুদ্র এই ফ্লু জাতীয় সংক্রামক ভাইরাসটি মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা যায় না। এটি বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, সার্স ভাইরাসের গোত্রীয় একটি ভাইরাস। আরেক নাম নভেল করোনাভাইরাস। ফেব্রুয়ারী মাসে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া নাম। যারা অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকিয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বে যাওয়ার পথে, যাদের জিডিপি(Purchaising Power Parity) ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে, মাথাপিছু আয় প্রায় ২০ হাজার ডলার, ৯৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটারে ১৪০ কোটি জনসংখ্যাবেষ্টিত দেশ। করোনার প্রভাবে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে কমে ৫.৪ শতাংশে নেমে যেতে পারে। পরাশক্তির এই দেশে খালিচোখে দেখা যায় না এমন একটি ভাইরাসের আক্রমণে ৪ হাজার ৬ শত ৩৩ জন (সরকারী তথ্য) মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ভিন্নমতে বিশ্বের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্যমতে প্রায় ৫০ হাজার চাইনিজদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই ক্ষুদ্র ভাইরাস। পেরেছে কী তারা তাদের ধ্যান-জ্ঞান, আবিষ্কার, গবেষণা, সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী কামানের গোলা, অর্থনীতির দাপট দিয়ে রক্ষা করতে আক্রান্ত মানুষের প্রাণ? পারেনি। কারণ এটি একটি মহামারী। মহামারীর প্রভাবে যুগে যুগে এভাবেই কেড়ে নিয়েছে মানুষের প্রাণ, পঙ্গু করে দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে, ভঙ্গুর করে দিয়েছে সভ্যতার সুসজ্জিত আবহকে। একটা মহামারীর রেশ কেটে গেলে আবার মানুষ তাদের আপ্রাণ চেষ্টায় ও পরিশ্রমে আবার কোন দেশ তথা বিশ্বকে প্রাণবন্ত করে তুলে। বেশিরভাগ আক্রান্ত দেশ লকডাউন ঘোষণা করছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কলকারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভেঙে পড়ছে উতপাদন ব্যবস্থা। বন্ধ হয়েছে নিয়োগ, চলছে কর্মী ছাটাই। কমে গেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ায় বিশ্ব বাজার ব্যবস্থার বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। থমকে গেছে শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিমান ও পর্যটন খাত লোকসানে। শেয়ারবাজারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

করোনার প্রভাব শুধু বিশ্ব অর্থনীতিতেই নয়, বাংলাদেশেও এর প্রভাব কম পড়বে না। অক্সফোর্ড ইকনমিক্স এর তথ্য মতে, বিশের অর্থনীতি ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতিতে পড়তে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়তে যাচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতির সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ও আমদানি-রপ্তানী নির্ভর আমাদের অর্থনীতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশগুলো। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের রেমিট্যান্স প্রাপ্তির কমে যাচ্ছে। তবে আশার কথা যে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। আমদানি- রপ্তানী কার্যক্রম প্রায় স্থবির হবার পথে। আমাদের পোশাক কারখানা সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে। উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে যেসব বৈদেশিক অর্ডার বাতিল হয়েছে বা হচ্ছে তাতে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। তদপুরি বিশ্বে করোনার প্রভাবে মৃত্যুর হার আংশিক কমেছে কিন্তু এ পরিস্থিতি কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানী বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর জার্মানী, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালী ও অন্যান্য। প্রধান আমদানি অংশীদার ভারত। এরপরে ইউরোপের দেশগুলো, হংকং, সিঙ্গাপুর ও চীন। এদেশের আমদানি ও রপ্তানি অংশীদার দেশগুলি মহা সঙ্কটে রয়েছেন করোনা পরিস্থিতি সামলাতে। এসব দেশের সাথে শুধু করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত পন্য আমদানি ছাড়া সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ। এটাই মূল সমস্যা। আর এই কারণেই করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আংশিক স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে এ ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১ লাখ কোটি টাকার উর্দ্ধে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

তবে আশারবাণী যে, বাংলাদেশের কৃষিখাত বেশ শক্তিশালী। এ দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় ২০%। এই ধরণের দুর্যোগে প্রথমে আমাদের চিন্তার বিষয় এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে খাইয়ে বাচিয়ে রাখা। যেহেতু আমাদের শিল্পখাতে করোনার প্রভাব বেশ খানিকটা লক্ষ্যণীয়, কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যের মজুদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই করোনা প্রভাব কেটে যাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

পরিসংখ্যান মতে প্রতি ১০০ বছর পরপর (১৬২০ সন, ১৭২০, ১৮২০, ১৯২০, ২০২০) বিশ্বে মহামারী দেখা দিয়েছে। এসব মহামারীর প্রভাব থেকে কোন দেশই রেহায় পায় না। করোনা ভাইরাস তেমন একটি মহামারী। এর প্রভাবে বাংলাদেশের ৬০টিরও অধিক জেলা আক্রান্ত। ইতোমধ্যে ৫০টির অধিক জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলাওয়ারী আজ পর্যন্ত তথ্য- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা মহানগর। ঢাকা মহানগরীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা -৩৭৫১ জন। ঢাকা (জেলা)-৯৯, গাজীপুর- ৩২২, কিশোরগঞ্জ-২০০, মাদারীপুর-৩৯, মানিকগঞ্জ-২১, নারায়ণগঞ্জ-৯২৩, মুন্সিগঞ্জ-১১০, নরসিংদী-১৪৫, রাজবাড়ী-১৭, ফরিদপুর- ১২, টাঙ্গাইল-২৯, শরীয়তপুর-৩০, গোপালগঞ্জ-৪৫, চট্টগ্রাম-৭৪,

কক্সবাজার-২৩, কুমিল্লা-৯৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪০, খাগড়াছড়ি-১, লক্ষীপুর-৩৫, বান্দরবান-৪, নোয়াখালী-৬, ফেনী-৬, চাঁদপুর-১৪, মৌলভীবাজার-১২, সুনামগঞ্জ-২৮, হবিগঞ্জ-৫৩, সিলেট- ১৮, রংপুর-৩১, গাইবান্ধা-২১, নীলফামারী-১৩, লালমনিরহাট-৩,

কুড়িগ্রাম-৭, দিনাজপুর-২০, পঞ্চগড়-৮, ঠাকুরগাঁও-১৬, খুলনা-১১, যশোর-৬৩, বাগেরহাট-২, নড়াইল-১৩, মাগুরা- ৭, মেহেরপুর-২ সাতক্ষীরা-১, ঝিনাইদহ-১৯, কুষ্টিয়া-১৫, চুয়াডাঙ্গা-৯, ময়মনসিংহ-১৪৩ জামালপুর-৬১, নেত্রকোনা- ২৯, শেরপুর-২৫, বরগুনা-৩০, ভোলা-৫, বরিশাল-৪০, পটুয়াখালী-২৭

পিরোজপুর-৯, ঝালকাঠি-৮, জয়পুরহাট-৩২, পাবনা-১০, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, বগুড়া-১৩, নাটোর-৯, নওগাঁ-১৫, সিরাজগঞ্জ-৩, রাজশাহী-১৯ (সূত্র ঃ আইইডিসিআর)।

চার মাস আগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস ক্রমে গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল।

গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। যদিও এরই মধ্যে সীমিত পরিসরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু পোশাক কারখানা সীমিত পরিসরে খুলতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে ০১/০৫/২০২০ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত- ৮২৩৮ জন, মৃত্যু-১৭০ জন, মোট টেস্ট-৭০২৩৯ জন, কোয়ারেন্টাইনে-৪২৫২৯ জন, মোট সুস্থ-১৭৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় মোট টেস্ট -৫৫৭৩ জন, আক্রান্ত-৫৭১ জন, মৃত্যু-২ জন।

বিশ্বে ২১০ টি দেশে অদ্যাবধি মোট আক্রান্ত-৩১ লাখ ৫৬ হাজার, মোট মৃত্যু-২ লাখ ২৯ হাজার ৩১৩ জন, মোট সুস্থ- ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬ শত। এদের মধ্যে প্রাণহানিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র(মৃত্যু/আক্রান্ত)- ৬১৭৯৭/১০৬৬৮৭৮ জন, ২য় অবস্থানে ইতালী- ২৭৬৮২/২০৩৫৯১ জন, ৩য় স্থানে- যুক্তরাজ্য-২৬০৯৭/১৬৫২২১ জন। এরপরে স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইরান, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, চীন, তুরস্ক, কানাডা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, মেক্সিকো, আয়ারল্যান্ড, ভারত, রাশিয়া, পর্তুগাল প্রভৃতি ক্রমঃ তালিকায় রয়েছে।

  আমরা মাঠ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিম্নোক্ত কাজ করে যাচ্ছি –

১) করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে জেলা প্রশাসকগণ করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হিসেবে সার্বিক সমন্বয়ের কাজ করছেন যেটা সবচেয়ে কঠিন কাজ।

২) বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসী যারা দেশে ফিরে আসে সিভিল এভিয়েশন থেকে তাদের নাম আর জেলা উল্লেখপূর্বক বিশাল একটা করে তালিকা পাঠায় যেটাকে বেস ধরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ডসহ জেলা প্রশাসনের অফিসারবৃন্দ, পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইসোলেশন ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা ছিল চ্যালেঞ্জিং কাজ।

৩) যেহেতু করোনা একটা ছোয়াচে ভাইরাস সেহেতু করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসা এসকল মানুষদের নিয়ে কাজ করতে আমাদের অনেক কর্মকর্তাই কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়। ইতিমধ্যে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছেন।

৪) কোয়ারেন্টাইন সহজে কেউ মানতে চায়নি। তাই আইন প্রয়োগ করে তাদের কোয়ারেন্টাইন মানতে বাধ্য করা হয়েছে। সেই সাথে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।

৫) এরপর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিলো মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং লকডাউনে ঘরে থাকা নিশ্চিত করা। এটি বাস্তবায়ন করতে প্রত্যহ জেলার প্রতিটি এলাকায় মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে এবং বিভিন্নধরনের মানুষের নিবিড় সংস্পর্শে এসে অনেক কর্মকর্তাই করোনা আক্রান্ত হয়েছে।

৬) যেহেতু ৫০টি জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে একটি জেলার সাথে অন্য জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং স্বাভাবিক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়; সেহেতু করোনা আপদকালীন মানুষের খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা/ত্রাণ বিতরণ ছিলো আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। দিন মজুর, দুঃস্থ অসহায় মানুষ, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, অটো চালকসহ নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা করে তাদেরকে মানবিক সহায়তা বাসায় পৌছে দেয়া হচ্ছে। অভাবগ্রস্ত মায়েদের দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জন্য মিল্কভিটার দুধ তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। দুর্যোগের শুরু থেকে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ বাজার ব্যবস্থা চালু করা হয়। মানুষের ঘরে ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পৌছে দেয়ার দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

৭) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার খোলাবাজারে ১০/- মূল্যে চাল বিতরণ মনিটরিং করা এবং বিতরণের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা এ সময় একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ।

৮) আমরা জানি ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে প্রায়শই অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। তাই জেলা প্রশাসকের মোবাইল নাম্বারে এবং কন্ট্রোল রুমের নাম্বারে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এটা ছিলো ত্রাণ বিতরণে একটি ইনোভেশনও বটে।

৯) আপদকালীন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম যাতে বাড়াতে না পারে সেক্ষেত্রে প্রত্যকদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। সবারই জানা করোনার প্রভাব শুরু হতে না হতেই আদার দাম ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। সেখানে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করে আদার দাম ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এবং বাজারে সেভাবেই বিক্রি হচ্ছে। রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

১০) জনগণের চলাচল সীমিতকরণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে করে মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না।

১১) সরকারী অন্যান্য নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনই কেন্দ্রীয় সরকারের একমাত্র আস্থার জায়গা। সঙ্গত কারণেই আমরা সর্বদাই জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত।

প্রশ্ন হচ্ছে যেসব কাজে আমরা নিয়োজিত তার প্রতিটি কাজেই জনগণের সম্পৃক্ততা থাকছে। এটা ঠিক জেলার প্রতিটি মানুষকে করোনা ঝুকি থেকে রক্ষা করা ও সচেতন করা আমাদের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দিনশেষে আমরা কী নিরাপদে থাকছি? সবসময় মানুষকে বলছি ঘরে থাকুন, নিজে নিরাপদে থাকুন, অন্যকে নিরাপদে রাখুন। সেক্ষেত্রে আমাদেরও একটি পরিবার আছে। আছে সন্তান-সন্তানাদি। আমি কী তাদের নিরাপদে রাখতে ঘরে থাকতে পারছি? কাজ শেষে যখন ঘরে ফিরছি, দরজা টপকাতে গিয়ে প্রতিদিনই একবার করে চিন্তা করছি, আমি আমার পরিবারের জন্য বিপদ ডেকে আনছি না তো? আল্লাহ সবাইকে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করুক।

লেখক ঃ সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!