শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

গরীবের ডাক্তার হতে চায় মেধাবী ছাত্রী প্রিয়া

  • আপডেট সময় রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ বাবা মাছ ধরে আর মা অন্যের বাড়ীতে রান্নার কাজ করে। একটি টিনের ভাঙ্গা ঘরেই পরিবারের ৫জনের বসবাস। যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলাই ভার, সেখানে আবার লেখাপড়াতো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ারই মতো।
তবুও অদম্য মেধা ও ইচ্ছা শক্তিকে পুঁজি করে দারিদ্রতার করাল গ্রাসে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে অন্যের কাছ থেকে বই সংগ্রহ আর অন্ধকার ঘরে কূপির আলো জ্বেলে লেখাপড়া চালিয়ে রাজবাড়ীর ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সকল বিষয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রিয়া রাণী মন্ডল(১৪)। সে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুরের দরিদ্র মৎসজীবী পূর্ণ চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে। বড় হয়ে প্রিয়া হতে চায় একজন চিকিৎসক। গরীব অসহায় রোগীদের দিতে চায় বিনামূল্যে সেবা। দাঁড়াতে চায় নিজের পায়ে। ৩ভাই-বোনের মধ্যে প্রিয়াই সবার বড়। ছোট্ট টিনের ছাপড়া ঘরে পরিবারের ৫সদস্যের বসবাস হওয়ায় লেখাপড়া করার মতো পর্যাপ্ত জায়গাটুকু মেলেনা প্রিয়ার। তবুও নিজের অদম্য ইচ্ছা আর মায়ের ভালোবাসায় লেখাপড়াটা চালিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু আগামী দিনে পড়ালেখার খরচ বহনের ব্যাপারে শংকিত হয়ে পড়েছে প্রিয়ার পরিবার।
প্রিয়ার প্রতিবেশীরা জানায়, ছোটবেলা থেকেই প্রিয়া অতি মেধাবী। পিএসসি পরীক্ষাও সে জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলো। সকলের দোয়া ও সহযোগিতা পেলে প্রিয়া একদিন নিশ্চয়ই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। ঘুচাতে পারবে দারিদ্রতা। মুছিয়ে দিতে পারবে বাবা-মায়ের চোখের পানি।
প্রিয়া জানায়, তিন বেলা খাবার জোটানোই বাবা-মায়ের পক্ষে কঠিন ব্যাপার। সেখানেতো লেখাপড়ার বিষয়টি বড় কষ্টকর। তবুও বাবা-মায়ের স্বপ্ন আমাকে লেখাপড়া করানোর। বাবা মাছ ধরে আর মা মানুষের বাড়ীতে রান্নার কাজ করে সংসার চালায়। খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের। তবুও লোখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। বড় হয়ে একজন ডাক্তার হবো, এটাই আমার স্বপ্ন। গরীব, দুঃখী, অসহায় মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে চাই। দাঁড়াতে চাই নিজের পায়ে।
প্রিয়ার মা সরস্বতী মন্ডল জানান, তার মেয়ে ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। ক্লাস ওয়ান থেকে এখন পর্যন্ত সব ক্লাসেই প্রিয়া মেধা তালিকায় প্রথম অবস্থানে থাকে। এমনও রাত গেছে কূপি জ্বালানোর মতো কেরাসিন তেল নেই। রান্নার তেলে প্রদীপ জ্বেলে মেয়ে লেখাপড়া করেছে। সবার দোয়া আর সহযোগিতা পেলে প্রিয়া একদিন অনেক বড় হবে।
প্রিয়ার বাবা পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল জানান, তার মেয়ের এই সাফল্য দেখে এলাকাবাসী ও প্রিয়ার শিক্ষকেরা অনেক খুশি হয়েছে। সবার দোয়া থাকলে প্রিয়া তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে।
প্রিয়ার গৃহ শিক্ষক রঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রিয়াকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে পড়াচ্ছি। প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম প্রিয়া মেধাবী। কোন বিষয়ে বুঝতে বা ধারণ করতে বেশী সময় লাগে না। প্রিয়ার ধৈর্য্য ও মেধা বেশ ভালো। জেএসসিতে তার সাফল্য গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতো। প্রিয়া বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ প্রিয়ার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানরা যদি প্রিয়াকে লেখাপড়ার ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে প্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
রাজবাড়ী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঈদা খানম প্রিয়ার সাফল্যের ব্যাপারে জানান, প্রিয়া এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান। আরো সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রিয়া অগ্রসর হতে পারবে। তার বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ পর্যন্ত নেই। বিদ্যালয় থেকে আমরা তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এবার জেএসসি পরীক্ষায় ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ এবং ৮০ জন জিপিএ-৪ পেয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!