শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

অলৌকিক অন্বেষণ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

# এডঃ লিয়াকত আলী বাবু # : রাত তখন সাড়ে তিনটা। কৃঞ্চপক্ষ রাতের শেষ প্রহর। হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বিরক্তিকর সুরে বেজে উঠলো। সবেমাত্র ফেসবুক থেকে লগ-আউট হয়েছে শরিফুল। সর্বশেষ ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট হচ্ছিল ‘রূপা মৈত্রির’ সাথে। ‘রূপা’ জামালপুরের মেয়ে। খুব ভালো কবিতা লেখে। ভাবছিল রূপাই হয়তো জরুরী কোন বিষয়ে ফোন দিয়েছে। রূপা মৈত্রির সাথে এখনো মুখোমুখি দেখা হয় নাই। তবে মাঝে-মধ্যে গভীর রাতে মোবাইলে লো-ভয়েজে কথা হয়। লাইট না জ্বালিয়েই মোবাইল ফোনটা কানের কাছে নেয় শরিফুল। গভীর রাতের কোন ফোনই সাধারণতঃ সুসংবাদ বয়ে আনে না। গভীর রাতের ফোন মানেই দুঃসংবাদের একটা অশনি সংকেত। শরিফুল হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সাব্বিরের কণ্ঠ ভেসে আসে। শরিফুল দোস্ত কেমন আছিস? আমি তোর বন্ধু সাব্বির। চিনতে পেরেছিস? সাব্বির! সাব্বির মানে? কোন সাব্বির? সাব্বিরতো এক বছর আগে মারা গেছে। পুরো নাম আতিকুল হক সাব্বির। ওর ব্রেইন টিউমার হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে চিকিৎসা করানোর পরও শেষ রক্ষা হয় নাই। শরিফুল নিজে সাব্বিরের দাফনে অংশগ্রহণ করেছিল। দাফন হয়েছিল বাদ মাগরিব। মাগরিবের নামাজের পরপরই দাফনের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় এশার কিছু আগে। সেদিন ছিল ভরা পূর্ণিমা। ভয়ানকভাবে বিভ্রান্ত হয় শরিফুল। এক লাফে বিছানার উপর উঠে বসে। বাম কান থেকে ফোনটা ডান কানে নিয়ে আসে। শরিফুল আবার ভয় টয় পাচ্ছিস নাকিরে? শরিফুলের শরীরের সবগুলো লোম সজারুর কাঁটার মত দাঁড়িয়ে যায়। ভারী হতে থাকে নিশ্বাস। আস্তে করে প্রতি উত্তরটা দেয় ‘না ভয় পাই নাই, কিন্তু তুই? লাইটা জ্বালিয়ে নে বলেই সাব্বির হাল্কা একটা কাশি দিলো। কাশিটা খুব পরিচিত কাশি। সাব্বিরের কাশির শব্দটা একটু ভিন্ন সুরের। এটা নিশ্চিত সাব্বিরের কাশি। শরিফুল বেড সুইচটা খুঁজে পাচ্ছে না। সাব্বির বললো বাম দিকে হাতরাচ্ছিস কেন? সুইচতো ডান দিকে। শরিফুল ডান দিকে হাত দিতেই সুইচের সন্ধান পায়। কিন্তু লাইটটা জ্বললো না। ওহ্ বিদ্যুৎ চলে গেল! ভয় নেই, আমি তোর বন্ধু সাব্বির। শরিফুল আবারও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে কোন সাব্বির? আরে আমি তোর বন্ধু সাব্বির। আতিকুল হক সাব্বির। আগেই এতোটা ঘাবড়ে যাচ্ছিস কেন? অন্ধকার তাই? আমার এখানে আরও ভয়াবহ অন্ধকার। গোরস্থানের পাশে হয়তো লাইট আছে। কিন্তু কবরের ভিতরে খুবই অন্ধকার। বুঝিসইতো কবরের মধ্যে রাত-দিন কিছুই বোঝা যায় না। ভীষণ অন্ধকার। কবর থেকে কথা বলছিস মানে? ধুর পাগল, মানে আবার কি? থাকি কবরে আর ফোন দেব কি ঘর থেকে? শরিফুলের শরীর ভীষণভাবে কাঁপতে শুরু করে দেয়। শরিফুলের সমস্ত শরীর দিয়ে দর দর করে ঘাম ছুটছে। শরিফুল ফোনটা কানের সাথে শক্ত করে ধরে পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়। শরিফুলের মনে হচ্ছে সাব্বির তার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কি হলোরে শরিফুল? কথা বলছিস না কেন? তুই কি আমার জানালার পাশে এসেছিস? কেন তোর জানালার পাশে আসবো কেন? আমার কি তোর জানালার পাশে আসার কোন সুযোগ আছে? না মানে, মনে হচ্ছে তুই আমার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস। আরে পাগল, আমেরিকার থেকে কথা বললেও জানালার ওপাশ থেকে কথা বলছে বলেই মনে হয়। তুই কিন্তু অন্ধকারে বিছানার থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করিস না। কেন বিছানা থেকে নামবো না কেন? কোন সমস্যা? বিদ্যুৎ আসলে নামতে সুবিধা হবে। শরিফুল আরও ভয় পেয়ে যায়। খাটের পাশিটা শক্ত করে ধরে বসে। এই মুহুর্তে একটা সিগারেট ধরাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সিগারেটের প্যাকেটটা দরজার পাশে টেবিলের উপর। ভীষণ অন্ধকার। এই মুহুর্তে নামতে সাহস হচ্ছে না। কিরে নিজের থেকে কোন কথা বলছিস না কেন? খুব ভয় পেয়েছিস বোধ হয়। শরিফুল আরও একটু শক্ত হয়ে বসে। না ঠিক ভয় না, কেমন যেন একটু অস্থির অস্থির লাগছে। তা, তুই কবরের মধ্যে মোবাইল ফোন পেলি কিভাবে? ও পাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে। এখন শরিফুল একেবারে নিশ্চিত হয়ে যায়। এটা সাব্বিরের হাসি। সাব্বির ভেঙ্গে ভেঙ্গে হাসতো। হাসির মধ্যে হুবহু মিল। একি স্বপ্ন? শরিফুল বুঝে উঠতে পারে না। শরিফুল নিজের শরীরে চিমটি দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয় এটা স্বপ্ন না। শরিফুলের বড় ভাই রাকিবুল উঠোন পার হয়ে বাথরুমের দিকে যাচ্ছে। বড় ভাই সিগারেট ধরিয়েছে। সিগারেটের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বড় ভাই ল্যাট্রিনে বসে দু’টো করে সিগারেট খায়। এই মুহুর্তে ভাইকে ডাক দিতে ইচ্ছে করছে। বড় ভাইকে ডাক দিস না কিন্তু। বড় ভাইকে ডাক দিলে তোর সাথে আর গল্প করা যাবে না। এবার শরিফুলের অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। ওহ্ তুই জানতে চেয়েছিলি আমি কবরের মধ্যে মোবাইল ফোন পেলাম কিভাবে? আমি যখন হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছি তখনই মনে মনে একটা ফন্দি এঁটেছিলাম। ডাক্তার আমার মৃত্যুর সময় দিয়েছিল ১৮থেকে ২০ঘন্টা। ডাক্তারের দেওয়া মৃত্যুর সময়-সীমাটার কথা আমার কানে চলে আসে। আমি মৃত্যুটাকে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত দেখার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি। কেউই জানে না তার মৃত্যু কখন হবে। কিন্তু আমি জানতাম আমার মৃত্যু ১৮ ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হবে। ২০ ঘন্টা পরে হলে দুই ঘন্টা বাড়তি সময় পাওয়া যাবে। সারা বিশ্বের সব চাইতে হৃদয়হীন ব্যক্তি এডলফ হিটলার মৃত্যুকূপের মাঝে মৃত্যুর মুখোমুখি বসে তাঁর প্রেমিকা ইভা ব্রাউনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। বিবাহের মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। প্রেম, বিবাহ ও মৃত্যুর এত কাছাকাছি অবস্থান এটাই এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই কথাগুলো চিন্তা করতে করতে আমারও মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসতে থাকে। শরিফুল মন্ত্রমুগ্ধের মত সাব্বিরের কথাগুলো শুনছিলো। সাব্বির একটু কাশি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো। মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসা পর্যন্ত মোবইলটা আমার কাছেই ছিল। মোবাইলের ঘড়ি দেখে মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসার প্রহর গুনছিলাম। ১৮দিনের দিন শুক্রবার হয়। শুক্রবারের দিনটা মুত্যুর জন্য খুব ভালো দিন। শুক্রবারে বেহেশতের দুয়ার খোলা থাকে। ২০ দিনের দিন রবিবার হয়। রবিবারটা মুসলমানদের জন্য ততটা শুভ দিন না। মনে মনে শুক্রবারের প্রত্যাশাই করছিলাম। আমার মনের শেষ আশাটা বোধহয় আল্লাহ পাক বুঝতে পেরেছিলেন। ১৭দিনের দিন সন্ধ্যার পর থেকে আমার শরীরটা ভীষণভাবে খারাপ হয়ে আসতে থাকে। রাত দশটার দিকে একটু দুধ ছাড়া আর কিছুই খেতে পারলাম না। সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছিলো। আমি সবার অলক্ষ্যে মোবাইল সেট থেকে সিম এবং মেমোরী কার্ডটা খুলে হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে নেই। ইচ্ছা ছিল সিম ও মেমোরী কার্ডটা জিহ্বার নীচে রেখে দেবো। মৃত্যুর হিসাবে ১৮দিন হলে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় আছে। রাত বারোটার পর আমার ধীরে ধীরে শ্বাস কষ্ট শুরু হতে থাকে। আমি তখনই বুঝে ফেলি ২০ ঘন্টা না ১৮ ঘন্টার মধ্যেইে মৃত্যু দূত চলে আসবে। আস্তে আস্তে চোখের পাতাও ভারী হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে একবার তাকানোর চেষ্টা করলাম। চোখের সামনে সব কিছু হলদে রঙের মনে হলো। আমি গ্রামীণ কোম্পানীর সিম আর মেমোরী কার্ডটা জিহ্বার নীচে নিয়ে নিলাম। পাশ থেকে কান্নার শব্দ কানে ভেসে আসছিল। মনে হলো মা কাঁদছে। ঐ মহুুর্তে পৃথিবীর সমস্ত ঘুম আমার চোখের উপর এসে ভর করছিল। ঐ সময়টা বন্ধু তোর কথাটা খুব মনে হচ্ছিল। তোর সাথে শেষ সাক্ষাৎ হওয়ার প্রত্যাশাটা আমি অসুস্থ্য হওয়ার পর থেকেই আমার মনের মধ্যে জাগতে থাকে। তোর সাথে ছোটবেলার সব স্মৃতিগুলো মনের আয়নায় বার বার ভেসে উঠছিলো। গ্রামের গহীন জঙ্গল, নদীপাড়, ছোটবেলার ক্ষুদে বন্ধুদের নিয়ে সেই যাত্রাপালা করা, লুকিয়ে লুকিয়ে বিনয় পালের পিয়ারা চুরি করে খাওয়া, আরও কতো কি? তোর কি এসব কথা মনে আছে শরিফুল? শরিফুলের প্রতি উত্তর শুধুই ‘হুঁ’। মুহুর্তের মধ্যেই আমার জিভ, গলা এবং বুকটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে লাগলো। ভয়ানক পানির পিপাসা লাগছিল। তখন কথা বলার শেষ শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছিলাম। ধীরে ধীরে কান্নার সংখ্যা বাড়তে থাকে। মনে হচ্ছে কান্নার শব্দগুলো অনেক দূর থেকে ইথারে ভেসে আসছে। ধীরে ধীরে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। বুকের উপর বিশাল একটা পাথরের চাপ অনুভব করছি। পাথরটা ধীরে ধীরে বুকের মাঝে বসে যাচ্ছে। বুকের উপর কে যেন পাথর চেপে ধরছে। ভয়ানক কষ্ট হচ্ছিল। এ কষ্ট বোঝানো যাবে না যাবে না বন্ধু, কিছুতেই বোঝানো যাবে না। এ কষ্টের সঠিক কোন ব্যাখ্যা নেই। এরপর বিশাল একটা লোমশ হাত আমার নাক মুখ চেপে ধরলো। আমি প্রাণপনে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। কানের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছিল। চোখের পাতা দুটো ভেঙ্গে চোখের মণি’র উপর বসে গেল। এরপর মনে হতে লাগলো আমাকে কে যেন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মহাশূন্যের ভয়ানক অন্ধকারের মধ্য দিয়ে আমাকে চিৎ করে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উড়ে যাওয়ার সে কি ভয়ানক গতি। শুধু শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। আমি আর কিছুই স্মরণ করতে পারছিলাম না। আমি কে, কি আমার পরিচয়, কোথায় আমার নিবাস কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো আমি ভাসমান বরফ মেঘের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি। আমার সমস্ত শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। আমি ঠান্ডায় একেবারে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। আমি শত শক্তি প্রয়োগ করেও নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সাব্বিরের কথা শুনে শরিফুলেরও নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। শরিফুলের মনে হচ্ছে সাব্বিরের মত তারও এখন মৃত্যু হবে। শরিফুল পাথরের মত শক্ত হয়ে বসে আছে। কানের সাথে মোবাইল সেটটা যেন আঠার মত আটকে গেছে। আমার মেমোরী কার্ডে আমার মৃত্যুর সব ঘটনা রেকর্ড হয়ে আছে। আমি তোকে আমার এই মেমোরী কার্ডটা দিয়ে দিতে চাই। তুই ঐ মেমোরী কার্ডটা ওপেন করলেই দেখতে পাবি মৃত্যু কতটা ভয়ঙ্কর। তোকে একটু কষ্ট করে আমার কবরের পাশে আসতে হবে। আমার কবরের মাথার দিকে ছোট্ট এক ছোপ দুবলা ঘাসের জট হয়েছে। তার সাথেই ছোট্ট এক খন্ড পাথর পাবি। ঐ পাথরটা সরালেই আমার মেমোরী কার্ডটা পেয়ে যাবি। প্লিজ ঐ মেমোরী কার্ডটার ছবি শুধু তুই একা একা বসে দেখবি। মেমোরী কার্ডের মধ্যে আমার ঐ মৃত্যুর দৃশ্যটা দেখার পর তোর সাথে এই ফোনে আমার আবার কথা হবে। কারণ আমার মৃত্যুর শেষ দৃশ্য আমাকে জানতেই হবে। আল্লাহু আকবর। ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসতেই সাব্বিরের ফোনের লাইনটা হঠাৎ করেই কেটে গেল। শরিফুল আরও দুই তিনবার হ্যালো হ্যালো করে কোন সাড়া শব্দ না পাওয়ার পর ফোনের সুইচটা অফ করে দিয়ে লাইট জ্বালায়। ঘরের মধ্যে সব কিছুই ঠিক আছে। শরিফুল এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। আঁধারের ফোন আলাপের ঘোর কেটে যাওয়ার পর শরিফুল কিছুক্ষণ মেঝেতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর পাঞ্জাবীটা গায়ে দিয়ে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ীর উত্তর দিকে মসজিদ। শরিফুল মসজিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তখনো মুয়াজ্জিন ছাড়া কোন মুসল্লী মসজিদে আসে নাই। শরিফুল মোবাইল সেটটা নিয়ে মসজিদের সামনে পুকুর পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর হাতের মোবাইল ফোনটা ছুড়ে মারে পুকুরটার মাঝখানে। টুব্বুস করে একটা শব্দ হয়। এরপর শরিফুল ধীরে ধীরে মসজিদের মাধ্যে ঢুকে পড়ে। লেখক ঃ রাজবাড়ী জজ আদালতের সাবেক এপিপি ও কলামিষ্ট। বিঃ দ্রঃ- লেখাটি গত ১৪/৯/২০১৭ তারিখে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক সাহসী সময়ে প্রকাশিত হয়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!