॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মানসম্পন্ন ভ্যাকসিনের সার্বজনীন ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি ভ্যাকসিনটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ তিনটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগে গুরুত্ব এবং আরো বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে ইউএনজিএ’র ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে গতকাল ৪ঠা ডিসেম্বর এক প্রাক রেকর্ডকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবুও কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথমত, আমাদের যথা সময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের এ বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন যে ২০৩০ সালের উন্নয়ন এজেন্ডা সমতার নীতি দ্বারা পরিচালিত এসডিজি অর্জনে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলেন, ‘একইভাবে, যখন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কথা আসে, তখন কাউকে পিছনে রাখা সমীচীন হবে না। এটি মহামারী পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে।’
দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য বিবেচনা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউএইচও’র অ্যাক্ট এবং কোভাক্স সুবিধার উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তৃতীয়ত, কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারসমূহের পাশাপাশি, জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একে অপরের সাথে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।’ তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখনো এই মারাত্মক ভাইরাস এবং এর প্রভাব মোকাবেলায় এক কঠিন সময় পার করছে। এ প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রণে না আনলে কোভিড-১৯ কে কখনোই কোনো একটি স্থানে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। আসুন আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যত মহামারী মোকাবেলায় সমর্থ হবে।’ এই অধিবেশন কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় যৌথ পদক্ষেপ, বৈশ্বিক সংহতি এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আশ্বাস দেন যে বাংলাদেশ এ বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় সকলের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী এপর্যন্ত ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি লোক মারা গিয়েছে এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ মহামারী অনেক মানুষকে আরো দরিদ্র করে তুলেছে এবং আরো অনেকে ক্রমে দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সকল দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে, ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনে প্রবল ধ্বস নামায় মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহামারী মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণে এবং তা আরো উন্নত করতে এ সংকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। অনেক দেশই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ এ মহামারীর কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জীবন ও জীবিকা, আমাদের অভিবাসী জনগোষ্ঠিকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে এবং আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়ন সাফল্যকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা শুরু থেকেই এবং কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি এবং আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারী থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার সরকার ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব হ্রাস করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা আমাদের জিডিপির ৪.৩ শতাংশের সমান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাসের প্রথম দিকে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সরকার ২৫ মিলিয়নেরও বেশি লোককে সহায়তা প্রদানে সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারিত করেছে। তিনি জানান, ‘মহামারীটির দ্বিতীয় ধকল সামাল দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’