রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

থ্যালাসেমিয়া কি? কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮

## ডাঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ## আজ ৮ই মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ দিবসটিতে আসুন থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানি। থ্যালাসেমিয়া কি? : থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতা জনিত রোগ। এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। রক্তের ক্যান্সারও নয়। বাবা ও মা দুইজনই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। থ্যালাসেমিয়া বাহক আর থ্যালাসেমিয়া রোগী এক কথা নয়। থ্যালাসেমিয়ার বাহক স্বাভাবিক মানুষরূপে বেড়ে ওঠে। তাই কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না, তা বাহ্যিকভাবে বোঝার কোন উপায় নাই। আর থ্যালাসেমিয়া রোগী জন্মের পর ৬মাস বয়স হতে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, জন্ডিস দেখা দেয়। আন্তে আস্তে পেটের প্লীহা ও লিভার বড় হয়ে যায়। ঠিকমতো শরীরের বৃদ্ধি হয় না। রক্ত স্বল্পতার জন্য প্রতি মাসে ১ থেকে ২ব্যাগ রক্ত শরীরে নিতে হয়। ঘন ঘন রক্ত নেওয়ায় ও পরিপাক নালী থেকে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে লিভার, হৃদপিন্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের নানা রকম মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত রক্ত না নিলে থ্যালাসেমিয়া রোগী ৫ থেকে ৬বছরের মধ্যে মারা যায়। প্রতিবার রক্ত নেওয়া ও আয়রন কমানোর ঔষধসহ অন্যান্য খরচে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪হাজার টাকার বেশী খরচ হয়। নিয়মিত রক্ত দিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সঠিক চিকিৎসা করালে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে ২০ থেকে ৩০বছর বাঁচানো সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তাই সবার পক্ষে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। অকালে ঝরে যায় হাজারও প্রাণ। পরিবারে আসে দারিদ্রতা।
থ্যালাসেমিয়া কেন হয়? লোহিত রক্ত কনিকার মধ্যে হিমোগ্লোবিন (হিম+গ্লোবিন) থাকে বিধায় রক্ত লাল দেখায়। স্বাভাবিক মানুষের লোহিত রক্ত কনিকার গড় আয়ু ১২০ দিন হলেও থ্যালাসেমিয়া রোগীর ত্রুটিপূর্ণ গ্লোবিনের কারণে লোহিত রক্ত কনিকার গড় আয়ু মাত্র ২০ থেকে ৬০ দিন। অপরিপক্ক অবস্থায় লোহিত রক্ত কনিকা ভেঙ্গে যায় বা মারা যায় তাই রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। মানবদেহে ১৬নং ক্রোমোজোমে থাকে আলফা জীন আর ১১নং ক্রোমোজোমে থাকে বিটা জীন। আলফা ও বিটা জীনদ্বয় আলফা ও বিটা গ্লোবিন নামক প্রোটিন তৈরী করে যা অনেকগুলো এমাইনো এসিডের সমষ্টি। জন্মগতভাবে ১৬ অথবা ১১নং ক্রোমোজোমের আলফা অথবা বিটা জীন সঠিকভাবে এমাইনো এসিড তৈরী করতে না পারলে আলফা অথবা বিটা গ্লোবিন নামক প্রোটিন ত্রুটিপূর্ণ হয়। আলফা অথবা বিটা গ্লোবিন চেইন ত্রুটিপূর্ণ থাকায় হিমোগ্লোবিন ত্রটিপূর্ণ হয় বিধায় লোহিত রক্ত কনিকা দ্রুত ভেঙ্গে যায় বা মারা যায় এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
বাংলাদেশে সমস্যা কোথায়? : থ্যালাসেমিয়া স্ক্রেনিং প্রোগ্রাম না থাকায়, অনেকেই জানেনা তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা। তাই অজান্তেই থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এবং দিন দিন থ্যালাসেমিয়া রোগী বাড়ছেই। বাবা-মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ার রোগী হওয়ার সম্ভবনা শতকরা ২৫ ভাগ, বাহক হওয়ার সম্ভবনা শতকরা ২৫ ভাগ আর সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা শতকরা ৫০ ভাগ। বাবা-মা যেকোনো একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তানের বাহক হওয়ার সম্ভবনা শতকরা ৫০ ভাগ, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ আর থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভবনা নাই। তাই ভাই-বোনের (চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো) মধ্যে বিয়ে এবং পরিবারের কারো থ্যালাসেমিয়া থাকলে থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
কিভাবে জানা যাবে আপনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না? : Haematology Autoanalyzer মেশিনে CBC পরীক্ষায় (মাত্র ২০০-৫০০ টাকায়) যদি Haemoglobin low, near normal or normal, RBC number normal or increased , MCV less than 80 fl, MCH less than 27 pgm, MCHC normal, RDW-CV normal (less than 15) হয়, তাহলে থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরপর Haemoglobin Electrophoresis করে থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে, ক্ষেত্রবিশেষ DNA analysis লাগে। বাবা-মা থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে মায়ের পেটের বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ার রোগী কিনা তা নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ একটি অঘটন সারা জীবনের জন্য কান্না। দুই জন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলেই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আসুন, বাধ্যতামূলক থ্যালাসেমিয়া স্ক্রেনিং চালু করি, বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করি। পোলিওর মতো থ্যালাসেমিয়ামুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।
লেখক ঃ ডাঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, এমবিবিএস, বিসিএস,এফসিপিএস, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান(হিমাটোলজি), ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!