॥বিশেষ প্রতিবেদক॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৭ উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত ২০শে ফেব্রুয়ারী থেকে চারদিন ব্যাপী শুরু হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ দেয়াল পত্রিকা উৎসব, একুশে বইমেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশী রেলওয়ে মাঠে বই মেলায় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দেয়াল পত্রিকা উৎসবে জেলা প্রশাসনসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ দেয়ালিকা প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা দেয়াল পত্রিকা দেখতে সমবেত হচ্ছে।
দেয়ালিকা উৎসবের আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র পৃষ্ঠপোষকতায় একুশের বইমেলায় দেয়ালিকা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় দেয়ালিকা উৎসবটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ। কারণ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০দেয়ালিকা পত্রিকা এখানে অংশ নিয়েছে, যা ইতিপূর্বে দেশের কোথাও দেখা যায়নি। যার ফলে উৎসবস্থল মাঠে জায়গা দেয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা আরো বলেন, আমাদের সন্তানদের মুক্ত বুদ্ধিসম্পন্ন, সৎ, দক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দেয়াল পত্রিকা অনুশীলনকে একটি নিয়মিত চর্চায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতা ও উৎসব আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখবে। দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতা ও উৎসবে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক-বিভাগে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খ-বিভাগে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ-বিভাগে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘ-বিভাগে আগ্রহী ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান/দপ্তর/ক্লাব বা সংগঠন অংশ নিতে পারবে। দেয়াল পত্রিকার ইতিহাস বেশ পুরনো। ভাবের আদান-প্রদান, শিল্প ভাবনা বিনিময়, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও মনোবিকাশের মাধ্যম ছিল দেয়াল পত্রিকা। জেলা প্রশাসন এ দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতা, উৎসবের মধ্য দিয়ে সবাইকে মনের মুক্ত চিন্তা-ভাবনা চর্চায় উদ্ধুদ্ধ করতে যাচ্ছে। যাতে করে আমাদের সন্তানেরা মাদকের করাল গ্রাস থেকে দূরে থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করে নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশী রেলওয়ে মাঠে দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ হাতে তৈরী করা দেয়ালিকা নিয়ে হাজির হয়েছে। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের দেয়ালিকায় বাংলা আমার, আমি বাংলার, সোনার বাংলা, প্রভাত ফেরির গান, ভাষা থেকে স্বাধীনতা, গল্প কথার বাংলা, বিজ্ঞান সমগ্র, আজকের রাজবাড়ী, দি মেইন ইভেন্ট অফ সাইন্স প্রভূতি শিরোনামে তারা দেয়ালিকা তৈরী করেছে।
বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান সাকিব জানায়, ভালোবাসা এবং ভালো লাগার জায়গা থেকে সবাই মিলে এই কাজে অংশ নিয়েছি। একত্রে আমরা সবাই এমন একটি ভালো কাজে অংশ নিতে পারায় নিজের কাছে খুবই আনন্দ লাগছে।
৮ম শ্রেণীর ছাত্র আহনাব জাবির জানায়, এই উৎসবের মাধ্যমে নিজেরা জানতে পারছি পাশাপাশি আমরা অন্যদেরও জানাতে পারছি। এই ধরনের উৎসব এর আগে কখনই হয়নি।
বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অলিউল আজম ও জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগিতায় ২০০শিক্ষার্থীর পরিশ্রমের কারণে গত ১০দিনে প্রায় অর্ধশত দেয়ালিকা তৈরী সম্ভব হয়েছে। আমার মতে একটি বিদ্যালয় থেকে দেশে এর আগে কখন হয়েছে বলে জানানেই।
এছাড়া বই মেলায় ভাষা শহীদদের আলোচনা সভা, ডাঃ আবুল হোসেন কুইজ প্রতিযোগিতা, বির্তক, আবৃত্তি, রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীসহ প্রতিদিন নানা আয়োজন চলছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে। চলছে পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী নিয়ে জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমীর যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সঙ্গীত অনুষ্ঠান।
জেলা প্রশাসক জিনাত আরা বলেন, রাজবাড়ীতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের বেশি বেশি করে প্রচার হওয়া দরকার। কারণ এমন অনুষ্ঠান সাধারণ দেশের অন্য কোথাও খুবই কম দেখা যায়। তাই সকলকে বেশি বেশি করে পদ্মা কন্যা রাজবাড়ীর প্রচার ও প্রসারে সহযোগিতা কামনা করেন।