॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে গতকাল ২০শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৬টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন ও জেলার ৫জন গুনী শিল্পীকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা-২০১৫ প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেন ও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের বেসরকারী সদস্যদের বিল এবং সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্যমোঃ জিল্লুল হাকিম। জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী।
অন্যান্যের মধ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার পাল স্বাগত বক্তব্য ও সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে নাট্যকলায় সম্মাননাপ্রাপ্ত আব্দুল ওয়াহিদ মন্ডল বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিমের সহধর্মিনী মিসেস শাহিদা হাকিম ও পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মানোয়ার হোসেন মোল্লা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, রাজবাড়ী থানার ওসি মোঃ আবুল বাসার মিয়া, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন, কাজী হেদায়েত হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মীর মাহফুজা খাতুন মলিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম তার বক্তব্যে বলেন, রাজবাড়ী জেলার ৫জন গুনী শিল্পীকে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে বিভিন্ন বিষয়ে সম্মাননা একটি মহৎ উদ্যোগ। আজকে যার সম্মাননা পাচ্ছেন তারা নিঃসন্দেহে রাজবাড়ী জেলার একেকজন ভালো শিল্পী ও তারা তদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অতীতের মতোই ভালো অবদান রাখছেন। আজকের মতো ভবিষতেও গুনীদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে নতুনদের উৎসাহিত করার জন্য তিনি আয়োজকদের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, ফেব্রুয়ারী মাস আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস। এই ২১শে ফেব্রুয়ারী এক সময় শুধু বাংলাদেশে পালিত হতো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দিবস হিসেবে বিশ্বের সব দেশে পালন করা হয়। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা সৃষ্টির মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা। তবেই আমাদের এই মাতৃভাষার জন্য শাহাদৎ বরণকারী শহীদদের আত্মাহুতি দান সার্থক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ২০১৫ সালের সম্মাননাপ্রাপ্ত গুনী শিল্পীদের আরো বেশী উদ্যোগী হয়ে তাদের শিল্পকর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান। তিনি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ দিবসে একুশে বইমেলাসহ সকল অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক জিনাত আরা তার বক্তব্যে শুরুতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সকল ভাষা শহীদ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, ১৯৪৮ সালের দেশ বিভাগের পর থেকে শাসক গোষ্ঠী আমাদের উপর বিভিন্নভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে তারা আমাদের মাতৃভাষা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের জাতিসত্ত্বাকে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী তারিখে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সেই ভাষাকে রক্ষা করে। সেদিনের সেই ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিনটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বে পালন করা হয়। আমরাও রাজবাড়ীবাসী সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করি। সেই উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় এবারও রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানের বইমেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম প্রহর থেকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসনসহ সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সম্মাননাপ্রাপ্তদের তাদের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও এই সম্মাননা প্রদানের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমী ফটোগ্রাফিতে আব্দুল হালিম বিশ্বাস, লোক সংস্কৃতিতে মোঃ আব্দুস সোবহান, যাত্রায় নরেশ চন্দ্র ঘোষ, নাট্যকলায় আব্দুল ওয়াহিদ মন্ডল ও কণ্ঠ সঙ্গীতে শ্যামা রানী দে’কে ২০১৫ সালের সম্মাননা স্বরূপ মেডেল, সার্টিফিকেট ও দশ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।
এরআগে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিমসহ বিশেষ অতিথি, সভাপতি ও অন্যান্য অতিথিদের ফুলের শুভেচ্ছা জানানোসহ উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।