শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৫দিনের ব্যবধানে পাশপাশি ৩টি ইউনিয়নে ৪খুনের ঘটনায় আতংক

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

॥আশিকুর রহমান॥ ১৫দিনের ব্যবধানে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাশাপাশি ৩টি ইউনিয়নে(মূলঘর, বানীবহ ও আলীপুর) ৩ জন নারী ও ১টি শিশুকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় ওই ইউনিয়নগুলোর মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় পুলিশী টহল জোরদার করার দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।
গত ২রা আগস্ট দিবাগত রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের পশ্চিম মূলঘর গ্রামে দাদী শাহিদা বেগম(৪৫) ও নাতনী লামিয়া আক্তার (৭)কে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
নিহত শাহিদা বেগমের পেডিকোটে(ছায়া) ও পায়ে মানুষের বীর্যের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত শিশু লামিয়ার বাবা গার্মেন্টস কর্মী শহিদুল ইসলাম(৩২) বাদী হয়ে পরদিন ৩রা আগস্ট রাজবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। থানার এস.আই মোঃ মেজবা উদ্দিন মামলাটির তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও হত্যার দায় কেউ স্বীকার করেনি। ফলে হত্যাকান্ডের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এর রহস্য উদঘাটন হয়নি।
এ ঘটনার ৫দিন পর গত ৭ই আগস্ট দিবাগত রাতে বানীবহ ইউনিয়নের আটদাপুনিয়া গ্রামে নিজ বসতঘরে দুই সন্তানের জননী গৃহবধু আদুরী আক্তার লিমা (২৫)কে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরদিন ৮ই আগস্ট নিহতের স্বামী রডমিস্ত্রী মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানার এস.আই বদিয়ার রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারাগারে পাঠালেও তারা কেউ হত্যার দায় কেউ স্বীকার করেনি। রহস্যও উদঘাটিত হয়নি।
সর্বশেষে গত ১৬ই আগস্ট দিবাগত রাতে আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামে হাজেরা বেগম(৪৮) নামের এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী তমিজউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। ১৫দিনের মধ্যে পাশাপাশি ৩টি ইউনিয়নের পাশাপাশি এলাকায় একই কায়দায় এই ৪টি খুনের ঘটনায় ওই ইউনিয়নগুলোর মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
বারবাকপুর গ্রামে গলা কেটে খুন হওয়া গৃহবধু হাজেরা বেগমের স্বামী তমিজ উদ্দিন বলেন, পশ্চিম মূলঘর গ্রামে দাদী-নাতনি হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে সেই বাড়ী আমার বাড়ীর দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। আর আটদাপুনিয়া গ্রামের যে গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে সেই বাড়ীটি আমার বাড়ী থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে। সে কারণে ওই ২টি হত্যাকান্ডের পর আমরা আতংকিত হয়ে পড়ি। যার ফলে আমার স্ত্রী হাজেরা বেগমকে আমি বড় ছেলে হাফিজুলের স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও নাতি সানি শেখের সঙ্গে ঘুমাতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি।
বারবাকপুর গ্রামের গৃহবধু হালিমা বেগম(৫০) বলেন, পাশাপাশি এলাকায় পরপর ৩টি হত্যাকান্ডের পর আমাদের গ্রামের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। কারো চোখে ঘুম নেই। কখন যে কে কার ঘরে ঢুকে গলা কেটে চলে যায়। কিন্তু এ রকম হত্যাকান্ড ঘটার পরও এলাকায় পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হয়নি। আমাদের দাবী, এলাকায় প্রতি রাতে পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হোক।
সাদীপুর গ্রামের আছমা বেগম(৪৮) বলেন, যাদের বাড়ীতে বেশী লোকজন থাকে না বিশেষ করে পুরুষ মানুষ থাকে না তাদেরকেই গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। আমার স্বামী মারা গেছে। একটিমাত্র ছেলে প্রবাসে থাকে ও একটি মেয়ে স্বামীর বাড়ীতে থাকে। গত ১৮ই আগস্ট রাত ৮টার দিকে আমার বাড়ীতে অপরিচিত একজন লোক প্রবেশ করে। তখন আমি ঘরের মধ্যে ছিলাম। পাশের বাড়ীর একটি মেয়ে ওই লোককে দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। এসময় ওই লোক দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে আমি ওই রাতেই বাড়ীঘর ফেলে রেখে বসন্তপুর ইউনিয়নে মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নেই।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মনোয়ারা বেগম বলেন, আলীপুর, মূলঘর ও বানীবহ ইউনিয়নের অনেক পরিবার হত্যার আতংকে ছেলে-মেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরের মধ্যে এক জায়গায় জড়ো হয়ে নির্ঘুম রাত যাপন করছেন।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হাসান বলেন, ঘরে ঢুকে গলা কেটে পরপর ৪টি খুনের ঘটনায় আমার ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছে না। আমরা এই শঙ্কার মধ্যে থাকতে চাই না। তাই সকলকে আরো সর্তক ও স্ব স্ব এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি।
মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ মান্নান মুসল্লী বলেন, আমার ইউনিয়নের মানুষের মধ্যেও হত্যার আতংক বিরাজ করছে। তবে মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে আমি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যদের নেতৃত্বে চৌকিদারদের দিয়ে প্রতি রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেছি।
রাজবাড়ী থানার ওসি মোঃ তারিক কামাল বলেন, পশ্চিম মূলঘরে দাদী-নাতনী এবং আটদাপুনিয়ায় গৃহবধু লিমা হত্যার ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই দুই মামলার অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া বারবাকপুরে গৃহবধু হাজেরা বেগম হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারেও পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ফোর্স সংখ্যা কম। ঈদ উপলক্ষে ফোর্সরা দৌলতদিয়া ঘাটে এবং সড়কে ২৪ ঘন্টা ডিউটি করছে। যে কারণে গ্রামে গ্রামে টহলের ব্যবস্থা করতে পারছি না। প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে চৌকিদার দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জরুরী কিছুর খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ফোর্স পাঠানো হবে।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!