রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

দুর্নীতি মামলার রায়ের পর বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের মাঝে বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট

  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

॥বিশেষ প্রতিনিধি॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং তার বড়পুত্র তারেক রহমানসহ অন্য আসামীদের ১০ বছর করে কারাদন্ড ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান জনাকীর্ণ আদালতে গত ৮ই জানুয়ারী এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের রায়ে, বেগম খালেদা জিয়ার সামাজিক মর্যাদা ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ৫বছর কারাদন্ড দেয়া হয়। এ মামলায় অপর আসামী তার পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেয় আদালত। সেই সঙ্গে তাদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার দিন গত ৮ই ফেব্রুয়ারী ১টা ৪০মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছান বেগম জিয়া। এদিকে সকাল ১০টা ২০মিনিটে আদালতে পৌছান বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।
এ মামলার অপর তিন আসামী পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এবং কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির অপরাধে দন্ডিত হলেন। এরআগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হন। তিনি সাজাও খাটেন।
উল্লেখ্য, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ই আগস্ট আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
আসামীদের মধ্যে এরআগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের এক মামলায় ৭বছরের সাজা দিয়েছে হাইকোর্ট। এ মামলার আসামী কারাগারে থাকা কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সাজা ঘোষণার পর আবারও তাদের কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
সাম্প্রতিক রাজনীতি পর্যালোচনা করলে বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর স্পষ্ট। দলে এখন ৫মাথা দৃশ্যমান। নেতাকর্মীরা নেতা মানছেন কেউ বেগম খালেদা জিয়াকে, কেউ তারেক রহমানকে, কেউ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে, কেউবা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আবার কেউবা রুহুল কবির রিজভীকে। দলের ক্রান্তিকালে একতার পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছানোর প্রবৃত্তি বিএনপিতে দেখা যাচ্ছে, যা দলের জন্য অশনি সংকেত বলছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপি অতীত কর্মকান্ডের জন্য এমনিতেই জনবিচ্ছিন্ন। নির্বাচনে না যাওয়ার মাশুল শেষ হবার আগেই এই অন্তদ্বন্দ্ব ও দলীয় কোন্দল বিএনপিকে নাকাল করছে। সামরিক লেবাসে জন্ম নেয়া বিএনপি গণতন্ত্রের পথে ভালভাবে এডজাস্ট করতে পারেনি কখনোই। সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জ তারা কিভাবে মোকাবিলা করে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার ভুল সিদ্ধান্ত ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের কারণে বিএনপি’র ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনীতি, নেতাদের ঐক্য ভাঙার পথে কাজ করছে। বেগম জিয়া কারাগারে যাবার মাত্র একঘণ্টার মধ্যে বিএনপিতে মত বিরোধ প্রকাশ্য আকার নিয়েছে। বিএনপির নেতারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন এবং বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে খালেদার অনুপস্থিতিতে কেউ তারেক জিয়া কে দল প্রধান মানছেন আবার অনেকেই এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে আপত্তি তুলছেন।
দলীয় ঘোষণায় বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট বিএনপিতে। গত ৭ই ফেব্রুয়ারী সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া রায় পরবর্তী আন্দোলনের কথা বললেও, মধ্যরাত নাগাদ রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির সিলপ্যাডের একটি ঘোষণায় নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়। দলীয় কমান্ডে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপিতে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও দিয়েছেন বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা। দলীয় প্রধানের বিপক্ষে গিয়ে তিনি নেতা কর্মীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেন।
দলীয় চেয়ারপার্সন ও বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ফারাকে বিভ্রান্ত ছিল নেতাকর্মীরা। তারা রায় পর্যন্ত ও পরবর্তীতে কোন দলীয় দিক নির্দেশনা পায়নি। তাহলে কি দলে চেয়ারপার্সন বিদ্বেষী মনোভাব গড়ে উঠল? বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
উভ্রান্ত দিকনির্দেশনার জন্যই দিকভ্রষ্ট ছিল বিএনপির কর্মীরা। একদিকে জনবিচ্ছিন্নতা, অন্যদিকে দিক নির্দেশনার অভাব বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেয়নি গত ৮ই ফেব্রুয়ারী তারিখে। ভবিষ্যতে দলের কর্মপরিকল্পনা কি হয় তা দেখার বিষয়। গত ৯ই ফেব্রুয়ারী তারিখে দলের বিক্ষোভ সমাবেশও ছিল বিক্ষিপ্ত। দলীয় মহাসচিব নেতাকর্মীদের ছেড়ে যখন পলায়ন করে তখন দলের রাজনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। বায়তুল মোকাররমের সামনে তারা ৩/৫ মিনিটের বিক্ষোভ করে, যা ফেলে জিপ নিয়ে চলে যান মির্জা ফখরুল। পরবর্তীতে সেটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নাশকতা অব্যাহত রাখার প্রয়াসও ছিল বিএনপির। রায় পরবর্তী সহিংসতা তারা দেখিয়েছে। রাস্তায় যানবাহনে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ-এগুলো মিডিয়া ফুটেজে ধরা পড়েছে।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিতর্কের পালে নতুন হাওয়া দিয়েছেন। সরকারী দলের সাথে সখ্যতা গড়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছেন এ নেতা। চতুর্মুখী বিতর্কের পালে আবদ্ধ এখন বিএনপি। বারংবারের ভুল সিদ্ধান্ত দলটিকে এখন দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে।
দুর্নীতি দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির অন্তরায়। কোন ধরণের দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই কারণ তাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশ্লেষকদের মতে খালেদা জিয়াকে কোন রাজনৈতিক দন্ড দেয়া হয় নাই, দেয়া হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারের সাজা। এ রায় দুর্নীতির দমনের জন্য, দৃষ্টান্ত কায়েমের জন্য। যে দেশে একজন এত প্রভাবশালীর নিরপেক্ষ বিচার হচ্ছে, সে দেশ বিচারিক কাজে দৃষ্টান্ত আকারে থাকবে। অন্যায়ের সাজা হওয়া বাঞ্চনীয়। মিথ্যা কখনো সত্যের উপর জয়ী হয় না। প্রভাবশালী খালেদা জিয়ার রায় প্রমাণ করে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধকে নিরুৎসাহী করতে এই রায় মাইলফলক আকারে থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ জনতার।
অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থানের দিন আগামী ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারী ধার্য্য রয়েছে। গত ১লা ফেব্রুয়ারী এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে পরবর্তী এ দিন ধার্য্য করা হয়। ওইদিন এ মামলার আসামী জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে টানা তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী। এরআগে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে দাবী করে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল দুটি মামলারই প্রধান আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে দুদক। চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা(আইও) দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামী হলেন ঃ খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিট্যাবল উভয় মামলায়ই ২০১৪ সালের ১৯শে মার্চ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!