বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

প্রশ্ন ফাঁস ঃ বিপন্ন জাতি বিপন্ন দেশ

  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

## বেলা রানী সরকার ## জন্মের পর একটি শিশু পরিবার থেকে প্রথম পাঠ নেয়। ৩/৪ বছর বয়স হলে তার প্রতিষ্ঠানিক পাঠ শুরু হয়। বিদ্যালয় বা কিন্ডার গার্টেনের মাধ্যমে লেখাপড়া আরম্ভ করে। স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করতে ২১/২২ বছর বয়সে পৌঁছে যায়। এত দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে শিক্ষার্থীদের কঠোর অধ্যবসায় করতে হয়, বাবা-মায়ের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিতে হয়, শিক্ষকদের পাঠদান করতে হয়। সাথে সাথে পিতা-মাতা ও সরকারের অর্থ ব্যয় হয়। বর্তমানে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা চলমান হলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ও চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেটই গ্রহণযোগ্য। শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা ১০টি ক্লাসের পাঠগ্রহণ শেষ করে পরীক্ষার হলে যায়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে দুশ্চিন্তা কাজ করে-প্রশ্ন ফাঁস হবে না তো! এতদিনের কঠিন অধ্যয়ন বিফলে যাবেনা তো! দিনরাত জেগে সারা বছর অধ্যয়ন করে মেধাবীরা সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখতে পারেনা। অথচ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে অনেক কম মেধাবী শিক্ষাথীরা অধিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো ফলাফল করে ফেলছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পরীক্ষার আগের রাতে পড়া বাদ দিয়ে ইন্টারনেটে ফাঁসহ ওয়া প্রশ্ন খুঁজে বেড়ায়। কোন না কোনভাবে পেয়েও যায়। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, অনেক অভিভাবকও ছুটছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে। পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বে হলের গেটে অভিভাবকেরা মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রশ্ন পেলেই তারস ন্তান যেন তা দেখে হলে প্রবেশ করতে পারে। আজকাল আবার বহু নির্বাচনীর প্রশ্ন উত্তরসহ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে। প্রশ্ন প্রণেতা ও প্রশ্ন মডারেশন বোর্ডের কেউ প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে। যদিও মডারেশন বোর্ডে একাধিক সেট প্রশ্ন মডারেশন করে সিলগালা করে রাখে। বিজি প্রেস প্রশ্ন ছাপায়। সেখানেও কোন অসাধু কর্মচারী প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে। যদিও বর্তমানে বিজি প্রেসে নিছিদ্র নিরাপত্তায় প্রশ্ন ছাপা হয়। বিজি প্রেস থেকে প্যাকেট করা প্রশ্ন একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জেলা ট্রেজারী, উপজেলা ট্রেজারীতে রাখা হয়। উপজেলা পর্যায়ে দূরবর্তী দুর্গম এলাকায় ব্যাংকেও প্রশ্ন রাখার বিধান রয়েছে। পরীক্ষার দিন সকাল ৯টায় ট্রেজারী থেকে প্রশ্ন বের করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্র সচিব নিজে প্রশ্ন নিয়ে ৯.৩০ মিনিটে প্রশ্নের প্যাকেট খুলে ভেন্যুগুলোতে প্রশ্ন প্রেরণ করেন। এই পথগুলেরা যে কোন পর্যায়েও প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। ট্রেজারী থেকে বের করে প্রশ্ন হলে পৌঁছানোর মাঝের সময় প্রশ্ন ফাঁস হতে শুরু করলে ধরে নেয়া হয় শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করছে। কিছু অসাধু শিক্ষকের জন্য সমগ্র শিক্ষক সমাজের কলংক হচ্ছে। দোষী শিক্ষকদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা উচিত। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্ন ফাঁস হলে তা শিক্ষকরা করছেন না। অন্য কোথাও থেকেও প্রশ্ন ফাঁস হয়। হতে পারে ট্রেজারী হতে, বিজি প্রেস থেকে। কোন মাধ্যমই সন্দেহের উর্ধেŸ নয়।
সরকার প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নিয়ম হয়েছে যে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে হলে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩দিন পূর্ব হতে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশ হয়েছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় সরকারকে ইন্টারনেট বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছেনা। ফাঁস হওয়া সকল প্রশ্ন যে সঠিক হয় তা কিন্তু নয়। অনেকে নিজের মতো প্রশ্ন তৈরী করে টাকা উপার্জনের জন্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। টাকা উপাজন ছাড়াও অনেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ইন্টারনেটে প্রচার করে। সঠিক, বেঠিক চিন্তা না করেই এসব প্রশ্নের পিছনে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা ধাবিত হচ্ছে। শুধু পাবলিক পরীক্ষাই নয়, চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে। এটা আরো মারাত্মক অঘটন। বেশীরভাগ চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে বহু নির্বাচনী প্রশ্নের মাধ্যমে, যেখানে শুধুু বৃত্ত ভরাট করতে হয়, লিখতে হয় না। যারা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পেয়ে যায় তারা অনেকেই মেধাবীদের পিছনে ফেলে বেশী নম্বর পেয়ে এগিয়ে যায়। আমাদের দেশে এ বছর ২০ লাখেরও বেশী পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তা স্বত্ত্বেও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বলেছেন যে ফাঁসকৃত প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের মিল নেই। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা ইন্টারনেেেট প্রশ্ন খোঁজার পেছনে সময় ব্যয় না করে পরীক্ষার বিষয়ে বই পাঠ করাই উত্তম। কতিপয় অসৎ, দুনীর্তিবাজ ব্যক্তির প্রলোভনে বিভ্রান্ত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে যারা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তাদের চিহ্নিত করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন। -লেখক ঃ প্রধান শিক্ষিকা, রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!