॥মাহ্ফুজুর রহমান॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছলেমান মোল্লা(৬০) পটল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ছলেমান মোল্লার মতোই পটল চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে এ গ্রামের অনেক কৃষকের। বছর জুড়েই এই সবজির চাহিদা থাকায় এবং অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশী হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদেরও দিন দিন পটল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। জনপ্রিয় এই সবজিটির আবাদ বাড়াতে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার কথা জানিয়েছে সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষক ছলেমান মোল্লা ৭/৮ বছর পূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তার মেহগনি বাগান কেটে ৫০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন পটলের আবাদ। প্রথম বছরেই পান ব্যাপক সফলতা। চলতি মৌসুমেও সে তাই নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমির সঙ্গে বর্গা নেয়া ৩০ শতাংশ জমির সবটুকুতেই করেছেন পটলের আবাদ।
কৃষক ছলেমান জানান, তার নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমিতে কাজলা জাতের পটল চাষ করেছেন। জমি তৈরী থেকে শুরু করে, বীজ, সার, মাচা তৈরীসহ সবমিলিয়ে জমিতে পটলের আবাদে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে এখান থেকেই সকল খরচ বাদ দিয়েও বছর শেষে প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকা লাভ হবে তার। তার নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমি থেকে সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই আড়াই মণ পটল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। গত চৈত্র মাস থেকে চলতি আষাঢ় মাস পর্যন্ত কেজি প্রতি তিনি ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কেজি দরে পাইকারী মূল্যে পটল বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে জানা গেছে, ছলেমান মোল্লার সাফল্য দেখে আগ্রহী হয়ে তার ছেলে জিয়াউর রহমান বর্গা নেয়া ৬০ শতাংশ, এলাকার আমির উদ্দিন ৪০ শতাংশ, সালামত মোল্লা ৬০ শতাংশ ও আলমগীর ৯০ শতাংশ জমিতে পটল চাষ করেছেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন শেখ জানান, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় এ বছর ২১০ হেক্টর জমিতে পটল চাষ হয়েছে। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন কৃষকের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। কারণ এতে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সর্বদাই আধুনিক পদ্ধতিতে পটল উৎপাদন এবং পোকা-মাকড় ও রোগ দমনে আইপিএম পদ্ধতিসহ বিভিন্ন কার্যকর পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
স্থানীয় কৃষক ওহেদ সরদার, ইসমাইল মন্ডল ও লোকমান বেপারী জানান, কৃষক ছলেমান মোল্লা সার্বক্ষণিক তার পটল ক্ষেতে কাজ করেন। সময় মতো সেচ, সার প্রয়োগ করে তিনি এলাকার সবার চেয়ে ভালো ফলন পান। বাজারে তার পটলের কদরও বেশী। আমরা মনে করি, ছলেমান একজন স্বাবলম্বী কৃষক। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং এ পটলের ন্যায্য মূল্য পেলে এ অঞ্চলে পটল চাষের পরিধি আরও বেড়ে যাবে বলে তারা মন্তব্য করেন।