॥এম.এইচ আক্কাছ॥ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে হিজড়াদের দৌরাত্ম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ রুট দিয়ে চলাচল করা যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
অশালীন আচরণ ও বিভিন্ন অপকৌশলে এরা অসহায় যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই কোন কোন যাত্রীকে পতিতাবৃত্তির প্রলোভনে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। একশ্রেণীর বখাটেরা এদের সহযোগিতা করে থাকে। এরা দৌলতদিয়া টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চ ও ফেরী ঘাট এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। বৈরী আবহাওয়া, ঘন কুয়াশা, ফেরী ও ঘাট সংকটসহ বিভিন্ন কারণে এ রুটের যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়। এ সময় তারা ফেরী, লঞ্চসহ বিভিন্ন কায়দায় পদ্মা নদী পারাপার হয়। যাত্রীদের এই আসা-যাওয়ার পথে হিজড়ারা ওৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা লঞ্চ, ফেরী ও বাসে থাকা যাত্রীদের সাথে বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এ সময় তারা যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং জোরপূর্বক টাকা-পয়সাও আদায় করে। অসহায় যাত্রীরা মান-সম্মানের ভয়ে টাকা দিয়ে ইজ্জত বাঁচিয়ে যায়। মনের মধ্যে হাজার ক্ষোভ থাকলেও যাত্রীদের কিছুই করার থাকেনা। ঘটনাগুলো ঘটছে অহরহ, প্রায় প্রতিদিন।
গত শুক্রবার ঢাকাগামী যুবক সাইফুল ও বরকত উল্লাহ জানান, দুপুরে তারা কুষ্টিয়া থেকে ট্রেনে এসে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনে নামার পর পায়ে হেঁটে ফেরী ঘাট যাওয়ার পথে একদল হিজড়া তাদের পিছু নেয়। তারা দল বেঁধে ফেরীতে ওঠার পর তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা না দেয়াতে যাত্রীদের গালাগালি শুরু করে। এক পর্যায় যাত্রীদের গায়ে হাত তোলে। প্রায় আধা ঘণ্টা হিজড়াদের অত্যাচার ও গালাগালি শুনতে হয় যাত্রীদের। এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই এ রুটের যাত্রীদের সহ্য করতে হচ্ছে।
হিজড়াদের হাতে আহত ও লাঞ্ছিত হওয়া গোয়ালন্দ মোড় এলাকার যাত্রী মাহ্ফুজুর রহমান জানান, ঢাকা যাওয়ার পথে তিনি ফেরী পারাপার বাসের যাত্রী ছিলেন। নদী পার হওয়ার সময় ফেরীর উপরে বাস দাঁড়িয়ে। তিনি বাসের মধ্যে বসা ছিলেন। হঠাৎ কয়েকজ হিজড়া কোমর দুলাতে দুলাতে বাসে উঠে এলো। হাতে তালি মেরে, শরীর দোলাতে দোলাতে দু’জন হিজড়া যাত্রীদের কাছে গিয়ে বলছে, এ্যাই দশ টাকা দে, টাকা না দিলে অকথ্য ভাষায় যাত্রীদের গালিগালাজ করতে করতে কাউকে কাউকে কাপড় খুুলে ফেলার হুমকিও দিচ্ছিল। এ সময় বাসের বাইরে একদল বখাটে যুবক হিজড়াদের তালে তালে শিষ বাজিয়ে উৎসাহিত করছিল। আর অসহায় মানুষগুলো জলদি জলদি টাকা তুলে দিচ্ছিল ওদের হাতে। একই অবস্থায় তার কাছেও টাকা দাবী করে। এ সময় তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করায় পাশের সিটের যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তার মুখে আঘাত করে। এতে তিনি হাল্কা আহতও হন। এভাবে হর-হামেশা যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটে চলেছে দৌলতদিয়া নৌ-রুটে।
এছাড়া গোয়ালন্দ উপজেলার গ্রামে গ্রামেও হিজড়ার দল উৎপাত শুরু করেছে। কারও বাড়ীতে শিশু জন্ম নিলে বা বিয়ে বাড়ীর খবর শুনলেই এরা ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করেই চেয়ে বসে মোটা অঙ্কের চাঁদা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেলে বাড়ী-ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুরসহ নানাভাবে হয়রানী করা হয় বাড়ীর লোকজনকে। এভাবেই চাঁদাবাজি করে চলেছে হিজড়া নামধারী চাঁদাবাজরা।