॥আবুল হোসেন॥ গতকাল শনিবার ভোররাতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১৩জন মাইক্রোবাসে করে বেনাপোল যাওয়ার পথে যশোর-মাগুরা সড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দুইজনসহ মোট ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ১০জন। এদেরকে স্থানীয়, ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল শনিবার এসব পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানায়, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার আবাসিক বোর্ডিং ও হোটেল ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ মোল্যা স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাতিজাসহ আতœীয়-স্বজন মিলে ১৩জন শনিবার ভোররাতে যশোরের বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। গোয়ালন্দ থেকে ভাড়া মাইক্রোবাসে তাদের বেনাপোল পৌছানোর কথা। সেখান থেকে ভারতের মেদনীপুর ওরশে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ভোর সাড়ে চারটার দিকে মাইক্রোবাস যশোর-মাগুরা সড়কের মাগুরার শেখপাড়া নামক এলাকায় পৌছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গাছের সাথে ধাক্কা খায়(যদিও কোন কোন সদস্যের দাবী পিছন থেকে একটি ট্রাক তাদের গাড়িকে ধাক্কা মারে)। এতে ঘটনাস্থলে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের নূর মোহাম্মদ মোল্যার স্ত্রী খোদেজা বেগম(৪৫) ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের উত্তর দৌলতদিয়া ওমর আলী মোল্যার পাড়ার মৃত আজগর আলী সরদারের স্ত্রী ফুলজান বিবি(৭০) মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর নুর মোহাম্মদের মেজ ভাই সালাম মোল্যার স্ত্রী মজিরন বেগম(৪০) মারা যান।
এছাড়া আহত নূর মোহাম্মদ মোল্যা(৫৫), মেজ ভাই সালাম মোল্যা(৫০), নিকট আতœীয় নুর জাহান বেগম(৭০), নূর মোহাম্মদের ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র রাসেল মোল্যা(১৫), ভাতিজা আলামিন(৯), করম আলীসহ(৩৫), অন্যদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে করম আলী, রাসেল মোল্যা ও আলামিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া বিকেলের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলামিনের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় তার লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা করেছে। এ নিয়ে মাগুরার দুর্ঘটনায় মোট চার জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া সন্ধ্যায় নুর মোহাম্মদ মোল্যার স্ত্রী খোদেজা বেগমের লাশ বাড়ি এসে পৌছেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নিহত ফুলজান বিবির বাড়িতে দেখা যায়, পরিবারের সদস্য ও নিকট স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। ফুলজান বিবির মেয়ে রাবেয়া বেগম জানান, দূর সর্ম্পকের আত্মীয় নূর মোহাম্মদ মোল্যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভারতের মেদনীপুর ওরশে যাচ্ছে শুনে মাও তাদের সাথে যাওয়ার বায়না ধরে। রাত তিনটার দিকে তারা এখান থেকে বের হয়। ভোরেই খবর আসে আমার মা আর বেঁচে নেই।
দেবগ্রাম তেনাপচা গ্রামে দেখাযায়, ফরিদপুর থেকে নূর মোহাম্মদের ভাই সালাম মোল্যার স্ত্রী মজিরন বেগমের লাশ পৌছেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য পাড়া প্রতিবেশী ও নিকট স্বজনদের কান্নায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
নূর মোহাম্মদের মামাতো ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, পরিবারের অনেকে কয়েকদিন আগে কোলকাতায় মেদনীপুর ওরশে যোগ দিতে চলে গেছে। বাকি সদস্যরা গত শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাইক্রোবাসে করে রওয়ানা করে। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের স্ত্রীর একত্রে মৃত্যু কেউ মিনে নিতে পারছিনা। বাকি সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আপাতত নিহত মজিরন বেগমের লাশ দাফনের প্রস্তুত রাখছি। অপর ভাইয়ের স্ত্রী খোদেজা বেগমের লাশ এসে পৌছলে একত্রে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।