বাসস : বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উপলক্ষে আয়োজিত আগামীকালের নাগরিক সমাবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ফিরে পাবে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আবহ।
লাখো লাখো মানুষ সেদিন যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে দেশ মুক্ত করার লড়াইয়ে দীপ্ত শপথ গ্রহণ করেছিল, তেমনি আগামীকাল সেই একই স্থানে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বিপ্লব সম্পন্ন করার লড়াইয়ের শপথ গ্রহণ করবে।
একাত্তরের ৭ মার্চের আবহ ফিরিয়ে আনতে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচী। সমাবেশস্থলকে সাজানো হয়েছে সে দিনের মতো করে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কৃত্রিম লেকে শোভা পাবে পাট বোজাই পাল তোলা নৌকা। আর নৌকার পালে থাকবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ, তোমাদের হাতে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে ইত্যাদি।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সমাবেশ। তারপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হবে। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে স্বরচিত কবিতা পাঠ করবেন কবি নির্মলেন্দু গুন।
তিনি পাঠ করবেন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে নিয়ে তার নিজের লেখা কবিতা, ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো।’
নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও ড. নুজহাত চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর।
বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হবে গান ও কবিতা। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা পাঠ করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। পরিবেশিত হবে রবীন্দ্র, নজরুল আর মরমী কবি লালন শাহের গান।
নাগরিক সমাবেশের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেলা আড়াইটায় শুরু হবে সমাবেশ। সমাবেশ সফল করার জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক বিশালাকৃতির নৌকার ওপর তৈরি করা হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ। মঞ্চের সামনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বসবেন। তারপর বাঁশের তৈরি বেঁড়ার পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে ২৫ হাজার চেয়ার। পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে জনতার জন্য সুন্দরভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। যাতে তারা সুন্দরভাবে সমাবেশে অবস্থান করতে পারেন।
সমাবেশস্থলে চিকিৎসক প্রতিনিধিদল থাকবে। যাতে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা গ্রহন করতে পারে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের পাশের গেইট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রবেশ করবেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত পাঁচটি গেইট দিয়ে সাধারণ জনগন প্রবেশ করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য অসীম কুমার উকিল বলেন, আগামীকালের সমাবেশ সফল করার জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নাগরিক সমাবেশে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দসহ প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দলসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামান্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
সমাবেশকে সফল করতে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে আহবায়ক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.হারুন-অর-রশিদকে যুগ্ম আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, নাট্যজন আতাউর রহমান ও একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল বাবু।