॥রঘুনন্দন সিকদার/কাজী তানভীর মাহমুদ॥ সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর,এমপি বলেছেন, ‘বিদেশী নাগরিক রোহিঙ্গাদের আমরা দু’হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করে আশ্রয় দিচ্ছি। তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিচ্ছি। সেই রকম একটি সময়ে কিছু কিছু মহল থেকে যাদের সাথে আমরা হাজার বছর ধরে বসবাস করছি সেই হিন্দু, বৌদ্ধ, পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও যড়যন্ত্রমূলক। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অস্থিরতা ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে সাম্প্রদায়িক মহল দেশে এই ধরনের কর্মকান্ড করছে।
গতকাল ১৫ই নভেম্বর সকালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে অবস্থিত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে বাংলা একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত মীর মশাররফ হোসেনের ১৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক(ভারপ্রাপ্ত) ড. এ.কে.এম আজাদুর রহমান, পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার এবং বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমীর সচিব (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
মীর মশাররফ হোসেনের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল। আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যে মীর মশাররফ হোসেনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। শুধু বাংলাদেশী নয়, সমগ্র বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। খ্যাতিমান এই লেখক ‘বিষাদ সিন্ধু’ রচনা করে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তার এই স্মৃতিকেন্দ্রটিকে ঘিরে এই অঞ্চলের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চাকে কিভাবে আরো বেগবান করা যায় যে ব্যাপারে আমরা কাজ করবো। দেশের অন্যতম একটি সংস্কৃতি কেন্দ্র হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা হবে।
এরআগে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিকেন্দ্রে পৌঁছে তার সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন।
এছাড়াও বিকেলে অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় অধিবেশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক বিনয় কুমার চক্রবর্তী এবং বালিয়াকান্দি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম মোস্তফা খান। সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফকীর আবদুর রশিদ। সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
উল্লেখ্য, কালজয়ী সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ই নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। পদমদীতেই তাকে সমাহিত করা হয়।