# শাহ্ মোঃ সজীব # বাবা বলতে আমরা এমন একজন মানুষকে বুঝি যিনি তার সকল সুখ, আনন্দ, অর্থ, সম্পদ তার সন্তানদের জন্য ব্যয় করেন। যিনি নিজে পুরাতন পোশাক পরিধান করে নিজের সন্তানের জন্য নতুন পোশাক কিনে দেন। যিনি নিজের শখ পূরণ না করে সন্তানদের শখ পূরণে ব্যস্ত থাকেন। যিনি ধার করে হলেও ছেলের বাইক বা মেয়ের নেকলেস কিনে দেন। যিনি তার সন্তানদের সামনে তার শত সহস্র দুঃখ এক তুড়িতে উড়িয়ে দেন। সন্তান কখনোই বুঝতে পারে না বাবার বুকের ভিতর কি আছে। এতেই বাবা খুশি। বড়লোক বাবারাও সন্তানদের বড় কিছু দেন। জন্মদিনে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার গাড়ী উপহার দেন। নিজে হয়তো চড়েন ৩০ লাখ টাকার গাড়ীতে। এগুলো সবই বাবার বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীতে সন্তানকে যে দুইজন মানুষ সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন তার মধ্যে বাবা অন্যতম। কিন্তু এই ‘বাবা’ শব্দের মতো মধুর ডাকটিও এখন আর আগের জায়গায় নাই। কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন বাবার অর্থ বিস্তার ঘটিয়েছে।
(ক) বাবা বলতে আমরা এখন মাদকও বুঝি। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের নানা জায়গা দিয়ে আসা এই ইয়াবা যুব সমাজের কাছে এত প্রিয় ও প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে যে, তারা এখন নিজের বাবাকে বাবা না বলে ইয়াবাকে বাবা বলে। জন্মদাতা বাবার দরকার নেই। কিন্তু ধ্বংসদাতা বাবার খুব দরকার। হায়রে দুনিয়া। গ্রামের সহজ-সরল বৃদ্ধ যদি শোনে কোন ছেলে বাবা খাচ্ছে তিনি হয়তো ভাববেন, হায়রে হতচ্ছাড়া নিজের বাপকেই খাচ্ছিস। এত ক্ষুধা তোর। তাই এখন বাবাকে ভালবাসার কথা শুনলেই এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ আগে জানতে হবে সে কোন বাবাকে ভালবাসে। বাবার তো অভাব নেই। এটা বললেও আবার ঐ সহজ সরল বৃদ্ধ ভাবতে পারে, আসতাগফিরুল্লাহ। আসতাগফিরুল্লাহ।
(খ) আরেক বাবা হলো দরগা বা ডেরার বাবা। এই বাবাও কিন্তু সাধারণ বাবা নয়। জন্ম না দিয়েই শত সহস্র, কেউ বা লাখো লাখো লোকের বাবা হয়। কিন্তু সমস্যা হলো যারা তাকে বাবা বলে ডাকে তাদেরকে আবার ‘যৌন গুহায়’ ডেকে পাঠায়। তা এক দুই জন নয়, হাজার হাজার। বাবার কত শক্তি রে বাবা। তাহলে এই বাবার কাছে যে ভালবাসা পাওয়া যায় তা কিন্তু অন্যরকম যেটা সাধারণের সাথে যায় না। বর্তমান বিশ্বে এমন বাবাও কম নয়। সুতরাং বাবার ভালবাসার কথা শুনলেই ‘সাধু সাধু’ বলে ধ্বনি তোলার দরকার নেই। কারণ কোন বাবা ভালবাসছে সেটা না জেনে এত খুশি হওয়ার কিছু নেই।
(গ) আরেক বাবা হলো ধর্ম বাবা, ইংরেজিতে যাকে বলে God Father এই বাবাও ভয়ংকর। অর্থ, ক্ষমতা ও নারী আঁকড়ে থাকার জন্য এই বাবা তাগড়া যুবকদের দলে ভেরায়। আর নিজে সাজে সবার বাবা। যদিও বিয়েই করেননি তিনি। তবে বাকী কাজ ঠিকই চলছে। এই বাবাকে ভোগের রসদ যোগায় তার সন্তানরা, যেটা স্বাভাবিকের সাথে যায় না। কিন্তু এই বাবার ক্ষেত্রে যায়। আবার তার সন্তানরা যদি সময়মতো সব সরবরাহ করতে না পারে তবে বাবা খুনিও হয়ে যায়। তাই বাবার কাছে সন্তান সবচেয়ে নিরাপদ এ কথা শোনার পর বিশ্বাস করার আগে ভাবতে হবে সে কোন বাবার কাছে আছে! আগেই উলু দিলে হবে না। স্বাভাবিক বাবা তার সন্তানের মেয়ে বন্ধুকে বউ মা বললেও এই বাবা মাঝে মাঝে ‘মা’টা বাদ দিয়ে দেয়। তাই সবার নিরাপত্তা সব বাবার কাছে হয় না। লেখক ঃ সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।