॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ‘অনেক মন্ত্রী-এমপির স্বজনেরা বেপরোয়া ঃ চলছে দখল, টেন্ডারবাজি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সরকারের উন্নয়ন ম্লান হচ্ছে, মনোনয়ন ঝুঁকিতে ৭০ এমপি’ শিরোনামে গত ২২শে মার্চ-২০১৭ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদের আংশিক বিষয়ের প্রেক্ষিতে পত্রিকার রিপোর্টার মেহেদী হাসান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য এবং কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর দায়েরকৃত অর্ধকোটি টাকার মানহানী মামলার তদন্তে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের সত্যতা মিলেছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল)-এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম মিসপি-৯২/২০১৭ মামলার তদন্ত শেষে গত ৩১শে মে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন(তদন্ত প্রতিবেদন) দাখিল করেন। গত ৩০শে জুলাই বিজ্ঞ আদালত রিপোর্টটি গ্রহণ করে আগামী ১৮/৯/২০১৭ তারিখ আদেশের দিন ধার্য্য করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে দৈনিক ইত্তেফাকে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয় এবং মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর দায়েরকৃত দন্ড বিধির ৫০০/৫০১ ধারার অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তদন্তকালে জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান বিরুদ্ধে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে থানার ওসিকে ফোন করে আসামী ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা, বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরের টাকা আত্মসাৎ করা, নিরীহ মানুষকে পুলিশ দিয়ে হয়রানী, উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ছাড়ানো এবং পুলিশের পোষাক পড়ে চাঁদাবাজীসহ যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তার স্বপক্ষে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তদন্তে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে পাংশা থানাধীন নারায়ণপুর গ্রামের ‘আনন্দ ভুবন’ নামক বাড়ীতে ‘অজ্ঞাতনামা’ সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলা-কুশলীগণ সিনেমার শ্যূটিংয়ের জন্য অবস্থান করেন। সিনেমাটির প্রায় ৮০ শতাংশ শ্যূটিং পাংশা পৌরসভা ও পাংশা থানা এলাকার বিভিন্ন স্পটে সম্পন্ন করা হয়। শ্যূটিংয়ের সময় এলাকার উৎসুক দর্শক অভিনয়ের দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে জমায়েত হয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। সে কারণে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং শিল্পীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পাংশা থানার অফিসার ও ফোর্স নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করে। অভিনেতা মোশারফ করিমসহ অন্যান্য অভিনেতাগণ দীর্ঘদিন পাংশা পৌরসভা এলাকায় অবস্থান করায় তাদের সাথে মিজানুর রহমান মজনুর সুসম্পর্কের সৃষ্টি হয়। উক্ত সিনেমায় মোশারফ করিম একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন। সুসম্পর্ক সৃষ্টির একপর্যায়ে মোঃ মিজানুর রহমান মজনু অভিনেতা মোশারফ করিমকে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন মোশারফ করিম ‘আনন্দ ভুবন’ বাড়ীতে উপস্থিত পাংশা থানার এস.আই মোঃ কামাল হোসেন ভুঁইয়া ও এস.আই মোঃ হাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে অভিনয়ের জন্য নির্ধারিত পুলিশের পোষাকটি মোঃ মিজানুর রহমান মজনুকে পরিধান করার জন্য বললে তিনি তা পরিধান করেন। শ্যূটিং স্পটে পুলিশের পোষাকটি পরিধান করার কিছু সময় পর তিনি তা খুলে ফেলেন। কিন্তু অভিনয়ের জন্য ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় সেখানে উপস্থিত থাকা মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর এলাকার লোকেরা মোবাইল ফোনে তার ছবি ধারণ করে এবং পরবর্তীতে তা ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। পত্রিকার সংবাদে উল্লেখিত মোঃ মিজানুর রহমান মজনুর পুলিশের পোষাক পড়ে চাঁদাবাজী করার বিষয়টি সত্য নয়।
মামলা তদন্তে সামগ্রিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা ও প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের বিবেচনায় গত ২২/০৩/২০১৭ইং তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম ও তার লোকদের সম্পর্কে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়। সংসদ সদস্য তথা সমাজের সম্মানী ব্যক্তিদের সম্পর্কে এরূপ সংবাদ পরিবেশন অসম্মানীয় ও সম্মানহানীকর বলে মন্তব্য করা হয়।
মামলার বাদী জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান মজনু রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে পত্রিকার রিপোর্টার ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিরুদ্ধে অসত্য ও মানহানীকর সংবাদ পরিবেশনের প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত মামলার বর্ণিত দন্ড বিধির ৫০০/৫০১ ধারায় অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
মামলার তদন্তকালে বাদী মোঃ মিজানুর রহমান মজনু, আরজীতে উল্লেখিত সাক্ষী কালুখালী উপজেলার সূর্য্যদিয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান তুরান ও মাওলানা সাদেকুর রহমান, গড়িয়ানা গ্রামের আব্দুল লতিফ মহাজন, শিবানন্দপুর গ্রামের মোঃ বাহারুল আলম এবং মামলার সংশ্লিষ্ট সাক্ষী রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাচিনা পারভীন নিলুফা, কাটাবাড়িয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম, খামারবাড়ী গ্রামের মোঃ মনজুর রহমান মিয়া, পাংশা থানার সাবেক ওসি এস.এম শাহজালাল, সাবেক এস.আই কামাল হোসেন ভুঁইয়া, বালিয়াকান্দি কলেজের প্রভাষক মোঃ নয়ন ইফতেখার, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির শাকিল, আখরজানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ জাহিদুজ্জামান, নারায়নপুর গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম, কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নবাব ও রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলীউজ্জামান চৌধুরী টিটোর লিখিত জবানবন্দী গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট আরো অন্যান্যদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা হয় বলে জানাগেছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু ও মামলার বাদী মিজানুর রহমান মজনু বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার সাথে তার এবং এমপি’র স্ত্রী’র বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। তারা আরো বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় অপরাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ মিথ্যা ও অপপ্রচারের ইন্ধনে পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছে।
এ প্রেক্ষিতে গত ২৩শে মার্চ-২০১৭ তারিখে জেলা পরিষদের সদস্য এবং কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদনা সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান মজন বাদী হয়ে রাজবাড়ীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতে দঃবিঃ’র ৫০০/৫০১ ধারায় মিসপি-৯২/২০১৭ মানহানীর মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে দিয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপারকে আদেশ প্রদান করে। আদালতের আদেশে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ফজলুল করিম মামলার তদন্ত শেষে গত ৩১শে মে আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন(তদন্ত প্রতিবেদন) দাখিল করেন।