॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ অল্প জায়গায় স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ড্রাগন ফলের চাষ। স্বল্প পরিসরে বাগানে, ফসলী জমিতে, এমনকি বাড়ীর ছাদে টবে ড্রাগন ফলের চারা রোপন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই।
রাজবাড়ী জেলাকে ড্রাগন ফলের জেলা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য গত ২০১৫ সালে রাজবাড়ীর সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম জেলায় ড্রাগন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে চাষী প্রশিক্ষণ ও কৃষি বিভাগের মাধ্যমে বিনামূল্যে ড্রাগন গাছ ও খুঁটি বিতরণ করেন। ওই সময়ে জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন বাগান গড়ে ওঠে। এই ড্রাগন ফল জেলার মানুষের কাছে নতুন হলেও এই ফলের চাষ রাজবাড়ীর মানুষের কাছে নতুন নয়। ড্রাগন ফল এখন জেলায় বেশ পরিচিতি।
বিভিন্ন ধরনের ভেষজ গুণ থাকায় রাজবাড়ীতে প্রায় প্রতিটি বাসা বাড়ীর আঙ্গিনায় ও ছাদে ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের চাষ। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। শুধুমাত্র একটু পরিচর্যা করলেই ড্রাগন গাছে ফল ধরে। তাই অনেক গৃহবধু ও চাষীরা ড্রাগন ফলের চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
দেখতে সুন্দর, স্বাদে সুস্বাদু ও অধিক পুষ্টিগুণ থাকায় রাজবাড়ী জেলার মানুষের মাঝে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। পাতাবিহীন এই গাছটি দেখে অনেকেই একে ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপী রঙের এই ফলের নাম শুনলে কেমন জানি অদ্ভুত মনে হয়।
২০১১ সালে রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য প্রয়োজন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।বছরে একটি ড্রাগন গাছ থেকে প্রায় ১৪০টি ফল পাওয়া যায়। এসব ফল আকার ভেদে ৪৫০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক চাষী গফুর কাজী জানান, তিনি তার ১০ শতাংশ ফসলী জমিতে ২০০টির অধিক ড্রাগন গাছের চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি গাছই এখন ফুলে-ফলে ভরা। ইতিমধ্যে তিনি এক মণের বেশী ড্রাগন ফল ঢাকায় প্রতি কেজি ৪৫০টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এতে তার ১৮হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত গাছগুলো ফল দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অনান্য ফসলের পাশাপাশি ড্রাগন চাষ অধিক লাভজনক।
রাজবাড়ী শহরের বেড়াডাঙ্গা ১নং সড়কের সৌখিন ড্রাগন ফল চাষী গৃহবধু সালমা আফরিন জানান, প্রথমে ঢাকার একটি ফলের দোকান থেকে ড্রাগন ফল কিনে খাওয়ার পর রাজবাড়ীর হর্টিকালচার থেকে এর চারা সংগ্রহ করে বাড়ীর ছাদে টবে রোপন করা হয়। এ বছরও বেশ কিছু ড্রাগন ফল গাছে ধরেছে। ড্রাগন ফল দেখতে সুন্দর, খেতেও বেশ সুস্বাদু।
একই এলাকায় বাড়ীর ছাদে বেশ কয়েকটি ড্রাগন ফলের চারা রোপন করেছেন সৌখিন ফল চাষী কাজী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি জানান, বাড়ীর ছাদে টবে বা ড্রামের মধ্যে জৈব সারের মাটি ফেলে তাতে ড্রাগন চারা পুঁতে দিলেই গাছ জন্ম নেয়। ড্রাগন গাছ তিন ফুট উঁচু হলেই একটি শক্ত চিকন খুঁটির সাথে সাইকেলের পুরাতন টায়ার ঝুঁলিয়ে দিলেই ড্রাগন তাতে ডালপালা বিস্তার করে। কয়েক মাস পরে ফুল ফোটে, ফল আসে। ড্রাগন ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রকিব উদ্দিন জানান, অল্প জায়গায় স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক ও নানা ধরণের ভেষজগুণ সম্পন্ন হওয়ায় রাজবাড়ীতে ড্রাগন ফলের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। স্বল্প পরিসরে এটি বাগানে, ফসলী জমিতে, এমনকি বাড়ীর ছাদে টবে রোপন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। প্রায় সব ধরণের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম।
তিনি আরো জানান, ২০১৫ সালে যুব উন্নয়নের আর্থিক সহায়তায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ড্রাগন চাষে আগ্রহী ২০০ জন কৃষাণ-কৃষাণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২হাজার ড্রাগন ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে। সেই চারাগুলোতে এখন ফল ধরেছে। এতে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।