॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ঢাকা ও লন্ডন এই নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন কপ ২৬-এর আগে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি ‘জলবায়ু চুক্তি’ স্বাক্ষর করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
গত ৩রা জুন রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দু’দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রয়োজন মেটাতে ২০২০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নাগাদ সম্মলিতভাবে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগাড়ের লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর যৌথ জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্য পূরণের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কপ ২৬-এর প্রেসিডেন্ট, ব্রিটিশ সাংসদ অলোক শর্মার তিন দিনের সফরের পরে উভয় দেশ এ যৌথবিবৃতি জারি করে।
সফরকালে শর্মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথে বৈঠক করেন এবং যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ জলবায়ু অংশীদারিত্ব নিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন।
যৌথ-বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কপ ২৬-এর সফল ফলাফলের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এবং গ্লাসগোতে একটি সম্ভাব্য সিভিএফ-কপ ২৬ ইভেন্ট বিবেচনা করবে।
যুক্তরাজ্যেও কপ ২৬ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা করেন উভয় দেশ প্রকৃতিকে তাদের জলবায়ু কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে জীব বৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণে কাজ করবে।
শর্মা ও ড. মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, তারা দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় টেকসই নেতৃত্ব প্রদর্শনের প্রতি সম্মতি জানায়।
দুই দেশ বিশেষজ্ঞ জ্ঞান আদান-প্রদান, প্রযুক্তি বিনিময়, অংশীদারিত্ব সুগম এবং অভিন্ন জলবায়ু চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যবহারিক সমাধান সনাক্ত করতে সম্মত হয়।
কপ ২৬-এর প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের কয়লা থেকে স্বচ্ছ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের প্রত্যাশাকে স্বাগত জানান, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
শর্মা ও মোমেন স্ব-স্ব দেশের উন্নয়নের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ ২৬ শীর্ষ সম্মেলনের আগে জলবায়ু ব্যবস্থা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
তারা প্যারিস রুলবুকের অসামান্য মেন্ডেট চূড়ান্তকরণসহ কপ ২৬-এ উচ্চাভিলাষী ফলাফল অর্জনের অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
কপ ২৬-এর প্রেসিডেন্ট শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নেট জিরো নিঃসরণ অর্জনের গুরুত্ব এবং এর সাথে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) সমন্বিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রিতে ধরে রাখতে, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিশেষত অভিযোজনে সর্বাধিক জলবায়ু অর্থায়ন এবং স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তি স্থানান্তরে সুনিদিষ্ট পদক্ষেপের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জি-২০-এর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের প্রয়োাজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে নেট জিরো টার্গেট নিয়ে আগামী সপ্তাহগুলোতে একটি উচ্চাভিলাষী আপডেট এনডিসি জমা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কপ ২৬-এর প্রেসিডেন্ট জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের প্রেসিডেন্ট হিসাবে এবং সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮ অস্তিত্বের হুমকি এবং চরম জলবায়ু ঝুঁকির প্রশ্নে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় নেতৃত্বকে স্বাগত জানান।
শর্মা বাংলাদেশের মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা এবং সর্বাধিক স্থিতিস্থাপকতার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ২০৩০ দশকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের কপ ২৬-এর গতিশীল নেতৃত্ব এবং প্রশমন, অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতা, জলবায়ু অর্থায়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে তাদের বিশেষ মনোনিবেশের প্রশংসা করেন।
তিনি প্রথম বড় অর্থনীতি হিসাবে যুক্তরাজ্যের ২০০০ সালের মধ্যে নেট-জিরো নিঃসরণ ঘোষণারও প্রশংসা করেন।
অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকশন কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য বাস্তব ক্ষেত্রে অভিযোজন ত্বরান্বিত করার জন্য স্থানীয় নেতৃত্বাধীন জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা উৎসাহিত করার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে অন্য কোয়ালিশনের সদস্যদের সাথে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।