বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু আর নেই

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল ১৪ই এপ্রিল বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। গত ১৩ই এপ্রিল থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
করোনা আক্রান্ত হওয়ায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে(সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় তার চিকিৎসা সেখানে চলছিল।
গত ৩১শে মার্চ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আবদুল মতিন খসরুকে কেবিনে আনা হয়েছিল। পরে আবার অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ই এপ্রিল তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ১৩ই এপ্রিল অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
গত ১৫ই মার্চ আব্দুল মতিন খসরু সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১৬ই মার্চ সকালে পাওয়া রিপোর্টে তার করোনা পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
গত ১০ ও ১১ই মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২০২২ সেশনের নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল মতিন খসরু।
আবদুল মতিন খসরু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে পাঁচ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি বর্তমানেও ওই আসনের সংসদ সদস্য।
আবদুল মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য জীবন ঃ তৃণমূল থেকে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে উঠে আসা রাজনীতিবিদ ছিলেন এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
একজন আইনজীবী হিসেবে শতভাগ পেশাদার ছিলেন তিনি। কুমিল্লা জজ কোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিসে সাফল্য অর্জন করেন তিনি। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরআগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য(প্রেসিডিয়াম সদস্য)। আবদুল মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৫বার। আমৃত্যু ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন আবদুল মতিন খসরু। ১৯৮২ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৩ই মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরবও রয়েছে তার। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন জেষ্ঠ্য আইনজীবী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
১৯৯১ সালে কুমিল্লা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় বিচারের পথ বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল পাসে আবদুল মতিন খসরুর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এ বিল পাস করার প্রাক্কালে জাতীয় সংসদে আবদুল মতিন খসরুর বক্তব্য অগনিত মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তার ওই বক্তব্য ছিল ঐতিহাসিক।
তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আমৃত্যু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আবদুল মতিন খসরুর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসায় করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও অন্যান্য রোগে গতকাল ১৪ই এপ্রিল বিকালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আবদুল মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই এক বোন। আবদুল মতিন খসরু ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে এক মেয়ের জনক।
তিনি ১৯৯২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থানীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।
আব্দুল মতিন খসরু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে আব্দুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে সংবিধান ও আইনের শাসন বিরোধী কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডর বিচারের ব্যবস্থা করেন তিনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।
আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা, নিজ জেলা কুমিল্লা এবং সারাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েও দায়িত্ব পালন শুরুর পূর্বেই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অভিভাবক আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শোকাহত আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!