॥স্টাফ রিপোর্টার॥ গতকাল ২১শে জুন দুপুর হতে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেনাসদস্যদের নিরন্তন প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এই সড়কটি চালু করা সম্ভব হয়েছে।
গতকাল ২১শে জুন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সড়কটি চালু করার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, যোগাযোগ সচিব, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার, কমান্ডার এসডব্লিউও।
গত ১৮ই জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রধান রাঙ্গামাটির দুর্গত এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নোত্তরে ৩দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কটি হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গতকাল বুধবার এই সড়ক চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী জনগণকে দেওয়া তাদের কথা রাখলো। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি রোডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাতছড়ি এলাকার ১০০ মিটার সড়ক। এটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাওয়ায় পাহাড় কেটে বিকল্প সড়ক তৈরী করে সেনাবাহিনী।
বিগত কয়েকদিনে রাঙ্গামাটি জেলায় প্রবল বর্ষণে এবং একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যসহ ও অচল হয়ে পড়ে। সেই সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, তখন এগিয়ে আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নসহ অন্যান্য সদস্যরা। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনর্বহাল এবং রাস্তা-ঘাট পুনসংস্কারে তিন পার্বত্য জেলায় ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের প্রায় তিন শতাধিক সদস্য বিপুল সংখ্যক ভারী যন্ত্রপাতি সহকারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বান্দরবান জেলার রুমা এবং রাঙ্গামাটির ঘাগড়া এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নের ২৩৩ জন সদস্য ২০টি ভারী যন্ত্র (১০টি ডাম্পার, ১টি হুইল লোডার, ৫টি এক্সেভেটর, ১টি হুইল ডোজার এবং ১টি লোডার) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা-ঘাট সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে। আগামী একমাসের মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে এবং রুমা-বান্দরবান রাস্তায় যান চলাচল করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
সেনাসদস্যরা প্রতিদিন রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক উদ্ধার অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি, দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও রশদ সরবরাহ করে আসছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে এবং পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্যমত প্রতিকূল ও বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি হতে লংগদু পর্যন্ত সড়ক পথে এবং সৈখান হতে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত নদীপথে ১টি জেনারেটর রাঙ্গামাটিতে প্রেরণ করা হয়। একইসাথে চট্টগ্রাম হতে ২টি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন জেনারেটর, ২টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, ৪টি ওয়াটার ট্যাংক, ২০০ জেরিকেন বিশুদ্ধ পানি, বিপুল পরিমান জ্বালানী তৈল প্রভৃতি সড়কপথে কাপ্তাই এবং পরবর্তীতে নদীপথে রাঙ্গামাটিতে প্রেরণ করা হয়। গত ১৬ই জুন রাঙ্গামাটিতে পানি বিশুদ্ধকরণ ২টি প্ল্যান্ট এবং ৪টি ওয়াটার ট্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গম এলাকাসমূহে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করণের মাধ্যমে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে পানিবাহিত ও সংক্রামক ব্যধির মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। গত ১৬ই জুন হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মোট ১,৬৮৬ জন অসহায় ও দুর্গতদের মাঝে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ৪৮৯২ জনকে দৈনিক দুই বেলা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, রশদ বিতরণ ও ৯০০ জনকে দুর্গতদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা ও বস্ত্র বিতরণ নিশ্চিত করে। বর্তমানে ৮টি মেডিক্যাল টিম ১৬টি স্থানে অসহায় ও দুর্গতদের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং ০৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গত জনসাধারণের মাঝে প্রতিদিন রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে।
পাহাড় ধসের ঘটনা পরবর্তী সময়ে বৈরী ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী প্রধান, ২৪ পদাতিক ডিভিশশনের জিওসি এবং কমান্ডার এসডব্লিউও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দুর্গত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেন। এই সময় সেনাবাহিনী প্রধান ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুর্গত এলাকার জনগণকে সার্বিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।