॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম না পাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষি বিভাগের অসহযোগিতার কারণে রাজবাড়ীতে অব্যাহতভাবে কমছে সোনালী আঁশ হিসেবে খ্যাত পাটের আবাদ।
রাজবাড়ী কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে রাজবাড়ীতে ৪৯ হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হলেও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তা ৪৭ হাজার ৮৮০ হেক্টরে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪৭ হাজার ১২০ হেক্টরে এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৪৬ হাজার ৪৮৫ হেক্টরে এসে দাঁড়ায়। অর্থাৎ গত ৩ বছরে রাজবাড়ী জেলায় পাটের আবাদ কমেছে ৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর অনেক আশা নিয়ে কৃষকরা পাটের আবাদ করলেও ঘুর্ণিঝড় আম্পানের কারণে অনেক পাট ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলোর হাল ছেড়ে দিয়েছে কৃষকরা। এছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে নীচু অঞ্চলের জমিতে পানি জমে থাকার কারণে অধিকাংশ জমির পাটের ফলন সেভাবে হয়নি। বর্তমানে পাট কাটাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কৃষকরা।
অব্যাহতভাবে পাটের আবাদ কমে যাওয়ার বিষয়ে কৃষকরা জানান, দিন দিন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু সেই তুলনায় পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর এক একর জমিতে পাটের বীজ, সেচ, পরিচর্যা, কাটা, জাগ দেয়া, ধোয়া- এসব বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আম্পানের প্রভাবে একর প্রতি গড়ে ১২ মণ করে উৎপাদন কমে এ বছর উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৫ মণ করে। বর্তমানে পাটের বাজার মূল্য প্রতি মণ ১৯শত টাকা। সে ক্ষেত্রে প্রতি একরে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে ১১ হাজার টাকারও বেশী।
বালিয়াকান্দি উপজেলার পাট চাষী প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠ পর্যায়ে না এসে সরকারের কাছে মনগড়াভাবে পাটের উৎপাদন, উৎপাদন খরচ ও বাজার মূল্য দেখায়। এ বছর মাঠের অর্ধেকের মতো পাট নষ্ট হলেও দাম কিন্তু বৃদ্ধি পায়নি। রাজবাড়ীতে বেসরকারীভাবে পরিচালিত ৪টি পাটকল থাকলেও কৃষকরা পাটের দাম কম পাচ্ছে। কারণ বাজারে সিন্ডিকেট রয়েছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস কৃষি বিভাগের বিরুদ্ধে পাট চাষীদেরকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আউশের আবাদ বৃদ্ধি এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে পাটের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে পাটের আবাদ ও ফলন দুইই কম হয়েছে। পাটের আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করবে।