### মুহাম্মদ ফয়সুল আলম ### আমাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও অমিত সম্ভাবনা রয়েছে, যা এ দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ জন্য চাই বৈশ্বিক ভাবনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সময়োপযোগী সুদূর প্রসারী সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন।
গত ১১ই জুলাই ছিল বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বোঝা। অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। এবার পালিত হয়েছে ৩১তম বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবারও বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল-ÔThe theme this year is based on safeguarding the health and rights of women and girls around the world especially during the time of Covid-19 pandemicÕ যার বাংলায় ভাবার্থ করা হয়েছে ‘মহমারী কোভিড-১৯-কে প্রতিরোধ করি, নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি’। ১৯৮৭ সালের ১১ই জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উন্নীত হয়। এর ফলে ইউএনডিপি’র গভর্ন্যান্স কাউন্সিল প্রতি বছর দিনটিকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব জুড়ে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
নাজমা খানম(৩০) আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তার ডেলিভারী হওয়ার কথা ছিল। জুন এর প্রথম সপ্তাহে তিনি করোনা পজিটিভ হন। এতে তিনি, তার পরিবার এবং তার চিকিৎসকও ঘাবড়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি করোনার চিকিৎসা নেন এবং তা সেরে যাওয়ার পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে মা ও সন্তান দু’জনই ভালো আছে।
আমেনা বেগম(১৫) থাকে ঢাকা শহরের এক বস্তিতে। চার মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। সে এখন গর্ভবতী। কিন্তু দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সে নিয়মিত চেক-আপ করাতে যেতে ভয় পাচ্ছে।
বাংলাদেশে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের আয়তনের দিক দিয়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশী। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা জনগণের এই মৌলিক চাহিদাগুলো রাষ্ট্রের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়ে থাকে। দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন চাহিদা ও উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে প্রতিনিয়ত ভূমি, পানিসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ছে। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জানমালের ক্ষতিসহ উন্নয়ন ও অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তুপ থেকেই দেশটির পথচলা শুরু। ছিল না অবকাঠামো, ছিল না কোন প্রতিষ্ঠানও। স্বাধীনতার পর থেকে অজস্র বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। একসময় বিশ্বে দুর্ভিক্ষে জর্জরিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল, যা এখন ইতিহাস। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। সামাজিক উন্নয়ন সূচকগুলোতে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। যেমন- শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার হার বেড়েছে অনেক। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মাথা পিছু আয় প্রকৃত অর্থেই তিন গুণ বেড়েছে, আর গড় আয়ু ১৯৭১-১৯৭২ সালের ৪৭ বছর থেকে ২০১৯ সালে ৭২.০৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ থেকে দেড় শতাংশে নেমে এসেছে। গণসাক্ষরতার হার দ্বিগুণ হয়েছে।
জনসংখ্যার বিচারে আমাদের দেশ বিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে। কোথাও কোথাও আবার নবমও উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (বিবিএস)-এর হিসেবে আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৪ লাখ এবং বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭৮ কোটিরও কিছু বেশী। আমাদের দেশের সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এর হিসাব মতে, প্রতি মিনিটে ২৫০টি শিশু জন্ম,গ্রহণ করে আর বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে ৯টি শিশু। এক জরীপে দেখা গেছে যে, বর্তমানে জন্মগ্রহণকারী ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৯৭ জন জন্মগ্রহণ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। এমনিতেই দেশগুলো অধিক জনসংখ্যার দেশ। সেদিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে এখন রোল মডেল বলে মনে করে।
বাংলাদেশ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জিডিপি অর্জনকারী দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮.২ শতাংশ। করোনা সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বিবিএস’র হিসাবে এরই মধ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। করোনা সংকটের মধ্যে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারত ছাড়া বাংলাদেশের ধারে কাছেও কেউ নেই। -পিআইডি ফিচার।