শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রাজবাড়ীতে কমিউনিস্ট পার্টির মানবিক খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের সাড়ে ৩মাস অতিবাহিত

  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ গত ২৬শে মার্চ থেকে একটানা রাজবাড়ীতে ছিণ্নমূল মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করে চলেছে কমিউনিস্ট পার্টি। ইতিমধ্যে এর সাড়ে ৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে।

এছাড়াও লকডাউনে আটকেপড়া উত্তরাঞ্চলের কৃষি শ্রমিকদের বাড়ী পাঠানোর ব্যবস্থা ও ৬ দফায় অতিদরিদ্র ১৪০টি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, আটা, চিনি, তেল, সুজি, সাবান ইত্যাদি) প্রদানসহ তাদের বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম সকলের প্রশংসা লাভ করেছে।

এর মূল উদ্যোক্তা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র রাজবাড়ী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি এবং সিপিবি’র গণসংগঠন বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবুল কালাম। আর তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে চলেছেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল জলিল, রাজবাড়ী শহর সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি আঃ সাত্তার মন্ডল এবং রেল শ্রমিক নেতা আঃ রহিম ডাবলু।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া শুরু করলে গত ২৫শে মার্চ থেকে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে সারা দেশের গণপরিবহন (ট্রেন-বাস) চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কয়েকশত ক্ষেতমজুর (কৃষি শ্রমিক) রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে আটকে পড়ে। করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারণে কৃষকরাও তাদেরকে কাজে রাখা থেকে বিরত থাকে। এ অবস্থায় আটকে পড়া এসব ক্ষেতমজুর ও রেলওয়ে স্টেশনে বসবাসকারী গৃহহীন ছিণ্নমূল মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়ে। হোটেল-রেঁস্তোরাগুলো বন্ধ থাকার কারণে যাদের কাছে সামান্য কিছু টাকা-পয়সা ছিল তাদের পক্ষেও খাবার কিনে খাওয়ার কোন উপায় ছিল না। এ অবস্থায় কমরেড আবুল কালামের উদ্যোগে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির ব্যবস্থাপনায় রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ফুলতলায় রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিদিন ৩ বেলা করে(সকালে, দুপুরে ও রাতে) গড়ে ২শত মানুষের মধ্যে এই খাদ্য বিতরণ চলতে থাকে। একই সঙ্গে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ী পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। রাজবাড়ী থেকে পদ্মা নদীর ওপারে পাবনার নাজিরগঞ্জ ঘাটে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রাকে ও মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব হয়। এভাবে মোট ২৬৪ জনকে বাড়ীতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদেরকে বাড়ী পাঠানোর পরও দিন দিন ফুলতলা থেকে বিতরণকৃত রান্না করা খাবার গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে প্রায় আড়াইশ’ জন ক্ষেত মজুরকে কাজে পাঠানো হয়। প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আটকে পড়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ও কাজে পাঠানোর ব্যবস্থাও চলতে থাকে। একপর্যায়ে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিন ১৫০-২০০ জন মানুষকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা দূরূহ হয়ে পড়ে। তখন কমরেড আবুল কালাম তার ফেসবুক আইডি (অনঁষ কধষধস পঢ়ন জধলনধৎর) থেকে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালালে অনেকেই তাদেরকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। অনেকেই বাড়ী থেকে রান্না করা খাবার এনে পৌঁছে দেন। কেউ কেউ চাল ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। শহর ও গ্রাম এলাকার বহু নারী-পুরুষ খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী নিজ চোখে দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

কমরেড আবুল কালামের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির এই মানবিক কার্যক্রম রাজবাড়ী জেলাব্যাপী ব্যাপক প্রচার পায়। অপরদিকে এ মানবিক কার্যক্রম চলার সময়ই সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে বিভিন্ন অঞ্চলের রিলিফ চুরির ঘটনা প্রকাশ পায়। তখন ফুলতলায় রান্না করা খাবার বিতরণ স্থলে কমিউনিস্ট পার্টি রিলিফ চুরির একটি স্ট্যাচু তৈরী করে রাস্তার পাশে বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে রাখে এবং রিলিফ চোরদের কঠোর শাস্তির দাবীতে ফেস্টুন টানিয়ে রাখে। পরে কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে রিলিফ চুরির প্রতিবাদে কর্মসূচীর ঘোষণা দিলে রাজবাড়ীতে রিলিফ চোরের কুশপুত্তলিকা দাহ করে সেই কর্মসূচী পালন করা হয়। এ কর্মসূচী চলার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ২/৩শত মানুষ সেটা দারুণভাবে উপভোগ করে। অনেককেই পায়ের জুতা-স্যান্ডেল খুলে রিলিফ চোরের স্ট্যাচুতে আঘাত করতে দেখা যায়।

রোজার মাসে ৩ বেলার পরিবর্তে ২ বেলা রান্না করা খাবার দেয়া হয়। গত ১৫/২০ দিন আগে ধান কাটা শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ কর্মক্ষম ক্ষেতমজুর ধান কাটার কাজে চলে গেছে। তারপরও গ্রাম থেকে নিঃস্ব হয়ে আসা কিছু নারী-পুরুষ যাদের ঠিকানা রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন সেই মানুষগুলোর পাশাপাশি ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন, প্রতিবন্ধী মিলিয়ে প্রতিদিন ৪০/৫০ জন মানুষকে এখনও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

এছাড়াও করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে থাকা নিম্ন আয়ের ও অতিদরিদ্র মোট ১৪০টি পরিবারকে ৬ দফায় (শবে বরাত ও ঈদ-উল-ফিতরের আগের রাতসহ) চাল, ডাল, তেল, চিনি, সুজি, সেমাই, আটা, সাবান ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত ২টি ক্ষেতমজুর পরিবারকে ১ মাসের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। রাজবাড়ী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির এ ত্রাণ তৎপরতা স্থানীয় পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পেয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে মানুষের ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে।

গত ৯ই জুলাই কমিউনিস্ট পার্টির এই মানবিক কার্যক্রমের সাড়ে ৩ মাস পূর্ণ হয়। এদিন বিকালে রাজবাড়ী শহরের ফুলতলায় রান্না করা খাবার বিতরণস্থলে দুস্থ-অসহায় মানুষদের মধ্যে জনপ্রতি ডিম-খিচুরীর ১টি করে প্যাকেটসহ ১টি করে সাবান ও ১টি করে মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলা সিপিবি’র সাবেক সভাপতি ও সিপিবি’র গণসংগঠন বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবুল কালাম, রাজবাড়ী শহর সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি আঃ সাত্তার মন্ডল এবং রেল শ্রমিক নেতা আঃ রহিম ডাবলুসহ স্বেচ্ছাসেবীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে আলাপকালে কমরডে আবুল কালাম যতদিন করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি থাকবেন ততদিন এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!