॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলায় জ্যামিতিক হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আজ ৩রা জুলাই নতুন করে আরও ৩২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৪৬ জনে।
এদিকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজবাড়ী শাখার ৮জন ও ইসলামী ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার ১১জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ব্যাংক ২টির রাজবাড়ী বাজারস্থ কার্যালয় আগামী ৫ই জুলাই থেকে ১৪দিনের জন্য ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, আজ শুক্রবার আরও ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এছাড়া ২জনের ফার্স্ট ফলোআপ রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে। গত ২৯ ও ৩০শে জুন তাদের নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছিল।
নতুন করে আক্রান্তরা হলেন-রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানখানাপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান(৬১), সোনালী ব্যাংক রাজবাড়ী প্রধান শাখার সোহরাব(৫০), সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের জুঁথি(১১), মৌসুমী(২৭), মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদপুর গ্রামের আরেফিন(৫৫), দয়ালনগর গ্রামের লাকি(৩৫), খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছী গ্রামের রশিদ মোল্লা(৬৫), রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার উৎপল(৩৬), বেড়াডাঙ্গা-১ এর মাসুদ(৪০), রাজবাড়ী সরকারী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সর্জ্জনকান্দার বাসিন্দা ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান(৫০) ও তার স্ত্রী রহিমা(৩৬), রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সের রিমন(২৪), সদর হাসপাতালের আরতী(৫৫), কানাই(৩২), গোয়ালন্দ পৌরসভার নছরুদ্দিন সরদারের পাড়ার মোঃ ইউসুফ সরদার(৩৮), পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শারমীন নাহার(২৮), আকলিমা খাতুন(৩৯), সরিষা ইউনিয়নের আন্দুলিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম(৩২), যশাই ইউনিয়নের ধুপাখালী গ্রামের হাফিজুর রহমান(৩৫), মৌরাট ইউনিয়নের বি-মালঞ্চী গ্রামের রমেন গোস্বামী(৪০), সুখদেব গোস্বামী(৩৪), পার্বতী গোস্বামী(৬৫), জয়ন্তী গোস্বামী(৩৮), বর্ণিতা গোস্বামী(৭), বর্ণা গোস্বামী(৩২), পাংশা পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের নাজমা বেগম(৫০), সাইফুল ইসলাম(২৯), মাগুরাডাঙ্গী গ্রামের অমল কুন্ডু(৬৫), বালিয়াকান্দি উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মোঃ আলী আকবর(৫৮), নবাবপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শাজাহান(৬২), সদর ইউনিয়নের পাইককান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলাম(৩২) এবং কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের পাকশিয়া গ্রামের বজলুর রহমান(৩৬)।
এছাড়া রাজবাড়ী শহরের ভবাণীপুর গোরস্থান এলাকার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী(৫৬) এবং বেড়াডাঙ্গা-২ এর শামসুজ্জামান(৪১) এর ১ম ফলোআপ রিপোর্টেও পজিটিভ এসেছে।
এদিকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজবাড়ী শাখার ৮জন ও ইসলামী ব্যাংক রাজবাড়ী শাখার ১১জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ব্যাংক ২টি কার্যালয় ১৪দিনের জন্য ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। আগামী ৫ই জুলাই থেকে কার্যকর হবে। লকডাউন চলবে ১৮ই জুলাই পর্যন্ত।
গত ২রা জুলাই রাজবাড়ী সদর উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান এবং সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নানের স্বাক্ষরিত এক পত্রে সোনালী ব্যাংক লিঃ ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের রাজবাড়ী শাখা লকডাউন ঘোষণা করে কিছু নির্দেশাবলী পালনের জন্য বলা হয়েছে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু সোনালী ব্যাংক লিঃ ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর ফলে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তার রোধে সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম আগামী ০৫/০৭/২০২০ ইং তারিখ হতে ১৪দিনের জন্য বন্ধ রাখার পাশাপাশি কিছু নির্দেশাবলী অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
নির্দেশাবলীর মধ্যে রয়েছে, মানবিক কার্যক্রমসহ জরুরী সরকারী সেবা বন্ধ করা যাবে না, আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৪দিনের জন্য হোম আইসোলেশনে এবং পরবর্তী ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংস্পর্শে আসা (৩ ফুট ও ১৫মিনিট সময়) এসেছেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যে সমস্ত কর্ম-কর্মচারীদের নমুন পরীক্ষার রিপোর্ট পেন্ডিং রয়েছে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংস্পর্শে আসা সকল স্টাফ এবং করোনার উপসর্গ আছে এমন স্টাফদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ১৪দিন পর ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার পূর্বে সদর উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
লকডাউন বিষয়ে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক সঞ্চয় কুমার দাস বলেন, লকডাউন চলাকালে ব্যাংকে গ্রাহকদের সেবা তথা লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা রাজবাড়ীর শ্রীপুর শাখা বা যে কোন শাখা থেকে অর্থ উত্তোলন বা জমা দিতে পারবেন।