রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল কুশাহাটার ২শতাধিক পরিবার ত্রাণ পায়নি ১মাসেও !

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০

॥মাহ্ফুজুর রহমান॥ প্রায় তিন যুগ আগে স্বামী হারান ১১০ বছর বয়সী বৃদ্ধা চেন্ত বেগম। এরপর থেকেই তার জীবন কাটে বহু কষ্টে এ চর থেকে আরেক চরে। বয়সের ভারে এখন বিছানা শয্যা চেন্ত বেগম। একমাত্র ছেলে ইসলাম সরদারের সঙ্গেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শুধু চেন্ত বেগমই নয়, এখানে রয়েছে এরকম শত কষ্টের গল্প।

‘বাজান গো, করোনা কী? আজও তো চোহি দ্যাখলাম না!’ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে এমনই কথা বলেন কুশাহাটা চরাঞ্চলের চেন্ত বেগমের মতো একাধিক মানুষ। গল্পটি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৭কিঃ মিঃ দূরে পদ্মার বুকে জেগে উঠা বিচ্ছিন্ন চর ‘কুশাহাটা’ চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। দীর্ঘ ৫বছর ধরে এ চরে তারা বসবাস করে আসছেন।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস, কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস সম্পর্কিত কোন বিষয়ই জানেন না চরাঞ্চলের প্রায় ২০০টি পরিবারের হাজারো মানুষ। করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, বুঝেই না হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন কী?

এই চরে তারা না খেয়ে থাকলেও মেম্বার-চেয়ারম্যানরা খোঁজ রাখেন না। আবার সরকারী ত্রাণ এখনও পাননি বলে দাবি চরাঞ্চলবাসীর। ফলে ত্রাণ চায় চরাঞ্চলের নিঃস্ব এসব মানুষ।

জানা গেছে, কুশাহাটা চরাঞ্চলে নেই কমিউনিটি ক্লিনিক, নেই সরকারী বিদ্যালয়, হাট-বাজারও নেই। এদের মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার তালিকায় রয়েছেন মাত্র ১৬০ জন। এমনটাই জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রহমান মন্ডল। বাকি সবাই মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার চরশিবালয় কানাইদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ৫বছর এ চরে তারা বসবাস করে আসলেও একপাশে মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলা, অন্যপাশে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা। চরের বাসিন্দা হওয়ায় অধিকাংশ সময় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব মানুষ।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চরাঞ্চলের সকলেই অসহায়, হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কৃষিকাজ ও মৎস্য শিকার তাদের পেশা। চরাঞ্চলবাসী পাকা ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজ শেষ করে ঘরে তুলছেন। বাড়ির মা-মেয়ে, ছেলের বউ বৈশাখের বৃষ্টি উপেক্ষা করেই হাতে হাত লাগিয়ে পেঁয়াজ সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছেন। কারও মুখেই নেই মাস্ক, হাতে নেই হ্যান্ড গ্লাভস। নেই সামাজিক দূরত্ব। জানে না করোনার ভয়াবহতা কী।

কুশাহাটা চরের বাসিন্দা আবুল শেখ, আকবর মন্ডল, মজনু বেপারী, খায়রুল বেপারীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কৃষিকাজ করেই তারা ভাতের যোগার করেন। কিন্তু মানিকগঞ্জের শিবালয়ে কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্দেশে নিয়ে গেলে ফেরত আসতে হয়েছে বেশ কয়েকদিন। জানতে পারেন, করোনার কারণে দোকান, হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে। একদিকে তাদের আবাদকৃত সবজি নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে লোকসানে পড়ছেন। এছাড়া পুঁজি-পাট্টা যা ছিল তাই দিয়ে এতদিন চলেছেন তারা। কিন্তু এখন ঘরে খাবার নেই, সামনের দিনগুলো কেমনে চলবে সেই চিন্তায়।

এসব মানুষদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা অনেক জায়গায় ত্রাণ দিচ্ছে, কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কিছুই পাননি। নির্বাচনের সময় ভোট নিতে আসেন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। কিন্তু না খেয়ে থাকার সময় কেউ ত্রাণ দিতে আসে না বলে আক্ষেপ করছিলেন চরের বাসিন্দারা।

চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও মানিকগঞ্জের শিবালয় সদর উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসান মাহমুদ বলেন, একটি দেশের জন্মগত নাগরিক হিসেবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মৌলিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা চরাঞ্চলবাসীরা তো মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রহমান মন্ডল জানান, চর কুশাহাটায় প্রায় ১০৮টি পরিবারে ১৬০ জন ভোটার রয়েছেন। তাদের ভোটার আইডি কার্ডে সংগ্রহ করে নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দ্রুতই তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!