॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা মডেল থানা পুলিশ গতকাল ১৯শে এপ্রিল দুপুর পৌনে ৩টার দিকে পাংশা পৌরসভার বাঁশআরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে(দরগাতলা বাজারের) একটি ভবন থেকে সরকারী ১৩৪ বস্তা চাল ও ১৩৫ প্যাকেট বিএডিসি’র পাটের বীজ উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ওই ভবনে থাকা আব্দুর রাজ্জাক শাহ(৫০) নামের একজন মুদি দোকানীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সরকারী চাল মজুদকারী ভবন মালিক যশাই ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল (৪৫)কে গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাক শাহ পাংশা পৌরসভার চরমৌদিপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
জানা গেছে, পাংশা শহরের বাঁশআরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে(দরগাতলা বাজারের) যশাই ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান মন্ডলের ৪তলা বিশিষ্ট ওই ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক শাহ মুদিখানা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ভবনের নিচ তলায় অপর কক্ষে ভবন মালিক ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের ব্যক্তিগত অফিস এবং পাশে তার ব্যক্তিগত গোডাউন।
পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আহসান উল্লাহ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাংশা থানা পুলিশ জানতে পারে যশাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডলের নিজস্ব গোডাউনে গোপনে বিপুল পরিমান সরকারী চাল রাখা হয়েছে। সেই সংবাদের ভিত্তিতে পাংশা থানা পুলিশ সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ১৩৪ বস্তা সরকারী চাল এবং ১৩৫ প্যাকেট বিএডিসি’র পাট বীজ উদ্ধার করা হয়। পরে উক্ত চাল ও বীজ জব্দ করে পাংশা থানায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় পাংশা মডেল থানার এস.আই ননী গোপাল বাদী হয়ে গ্রেফতাকৃত মুদি দোকানী আব্দুর রাজ্জাক শাহকে প্রধান আসামী এবং পলাতক যশাই ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডলকে ২নম্বর আসামী করে পেনাল কোর্ডের ৪০৬/৪০৯/৩৪ ধারায় পাংশা থানায় মামলা নং-৬, তাং-১৯/৪/২০২০ইং দায়ের করেছে। মামলায় আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। থানার এস.আই মোঃ রবিউল ইসলাম এ মামলা তদন্ত করছেন।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) মোঃ লাবীব আবদুল্লাহ ও এসিল্যান্ড নুজহাত তাসনীম আওন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আহসান উল্লাহ আটককৃত মুদি দোকানী আব্দুর রাজ্জাকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে যশাই ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল তার নিজ ভবনের নিজ কার্যালয় সংলগ্ন গোডাউনে উক্ত চাল রাখেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যশাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান মোবাইলে বলেন, করোনা ভাইরাসের পূর্বে যশাই ইউনিয়নের ভিরুমন্ডলের ঘাট হতে কামালের বাড়ীর দিকে আড়াই কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য ৪ মেঃ টন কাবিখার চালের ডিও হয়। করোনা ভাইরাস ও বৃষ্টি বাদলের কারণে কাজ বন্ধ থাকার কারণে চালগুলো আমার গোডাউনে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, পাংশা উপজেলাতে গরীবের হক যদি কেউ আত্মসাতের চেষ্টা করে সেগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, যশাই ইউপির চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের নিজস্ব গোডাউন থেকে ১৩৪ বস্তা সরকারী চাল এবং ১৩৫ প্যাকেট পাটের বীজ পুলিশ জব্দ করে। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিগত গোডাউনে চেয়ারম্যান সরকারী চাল রাখতে পারেন না। এটা বেআইনী। এই ঘটনায় মোবাইল করা সম্ভব হয় না বিধায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত যশাই ইউপির চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ফরিদ হাসান ওদুদ মন্ডলের আপন ছোট ভাই। ঘটনার পর থেকে যশাই ইউপির চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল পলাতক রয়েছেন