॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ করোনা ভাইরাসের কারণে রাজবাড়ী জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে জেলার ২শতাধিক দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামারীরা।
দিনের পর দিন হাজার হাজার লিটার দুধ নিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। খামারে কাজ করা শ্রমিকরা হতাশ হয়ে দিন পার করছেন। লোকসানের ক্ষতি নিয়ে বিপাকে পড়া এসব খামারীদের মাথায় এখন ঋণের বড় বোঝা।
জেলার সবচেয়ে বড় দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামার ‘এপিসোড এগ্রো লিঃ’। এটি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর গ্রামে অবস্থিত।
গতকাল ৫ই এপ্রিল সকালে ওই খামারে গিয়ে দেখা যায়, ২শতাধিক গাভী দুধের ভারে নড়তে পারছে না। শ্রমিকরা দুধ সংগ্রহে অনীহা প্রকাশ করছে। এসব গাভীর বাছুরগুলো দুধ খেয়ে শেষ করতে পারছে না। অতিরিক্ত দুধ সংগ্রহ করে তা ড্রামে রেখে স্থানীয় দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এপিসোড এগ্রো লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে ব্যাংক ঋণ নিয়ে এই দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামার শুরু করি। বর্তমানে এই খামারে উন্নত জাতের ৩ শতাধিক গাভী, ২শতাধিক বাছুর ও ২শতাধিক ষাঁড় পালন করা হচ্ছে। প্রতিদিন খামারে প্রায় ৯শত লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। গত ১০ই মার্চের পর থেকে জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলো করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে আমাদের খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছি না। কোন কোম্পানীও দুধ কিনছে না। এতে আমাদের ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। খামারে ২৪জন শ্রমিক কাজ করে। তাদের খাবার ও বেতন দিবো কীভাবে তা বুঝতে পারছি না। প্রতিদিন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে। এরপর আবার গরুর খাদ্য, ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে। উৎপাদিত দুধ আমাদের শ্রমিক ও স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের মাঝে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। আমার মতো জেলার প্রায় ২শত খামারী এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে লোকসানে পড়েছে। সরকারের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া হোক।
খামারের শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি এই খামারে ৪ বছরের বেশী সময় কাজ করছি। এমন খারাপ অবস্থা আগে কখনও হয়নি। মালিক দুধ বাজারে বিক্রি করতে পারছে না। তাই আমাদের বেতনও দিতে পারছে না। এ অবস্থায় আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের চককেষ্টপুর এলাকার খামারী জাহিদ হোসেন বলেন, আমার খামারে ৫টি গাভী ও ৫টি ষাঁড় রয়েছে। খাদ্যের সংকটের কারণে গরুগুলোকে ভালোভাবে যত্ন নিতে পারছি না। আবার দুধও বিক্রি করতে পারছি না। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। আমাদের সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফজলুল হক বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে খামারীরা আসলেই অসহায় হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত মোবাইল ফোন ও অ্যাপসের মাধ্যমে খামারীদেরকে নানাবিধ দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে উৎপাদিত দুধ দিয়ে ঘি তৈরী করে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করার। পাশাপাশি ঘি সংরক্ষণ করে রাখতে বলা হয়েছে। সরকার খামারীদের পাশে আছে।