॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪৫)কে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার অভিযোগে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসিফ মাহমুদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা রক্ষী তারিকুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গতকাল ১লা এপ্রিল থানায় হত্যা মামলা করা দায়ের হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী গুলশান আরা বাদী হয়ে গতকাল ১লা এপ্রিল উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় এ হত্যা মামলা নং-০১, ধারাঃ ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ দায়ের করেছেন।
মামলায় স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা(ইউএইচএফপিও) ডাঃ আসিফ মাহমুদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা রক্ষী তারিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্র করে অগ্নিদগ্ধ করে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম গত ২৬/০৩/২০২০ইং তারিখ অনুমান বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ার্টারের ২য় তলার নিজ কক্ষে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় এবং পরদিন ২৭/০৩/২০২০ইং তারিখ সকাল ৮.৫৫টায় তিনি মারা যান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই তার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ২৮/০৩/২০২০ইং তারিখ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গুলশান আরা ও অন্যান্য স্বজনরা গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ার্টারের সামনে যান এবং ইউএইচএফপিও ডাঃ আসিফ মাহমুদকে বার বার অনুরোধ করলেও তিনি কোয়ার্টারের ২য় তলার কক্ষটি তাদেরকে দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়াও তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাতেও অস্বীকৃতি জানান। সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোটর সাইকেলটিও দিতে অস্বীকৃতি জানান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা রক্ষী তরিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রকাশ করেন, সে কোথায় আছে জানি না।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সাইফুল ইসলাম অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ইউএইচএফপিও ডাঃ আসিফ মাহমুদই নাকি তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তার স্ত্রী গুলশান আরাকে না জানিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে গুলশান আরা বিষয়টি জানতে পেরে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আসিফ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফেরীতে আছেন বলে জানান। পরবর্তীতে গুলশান আরার ঢাকায় অবস্থানরত ছোট ভাই যখন সাইফুল ইসলামকে দেখতে যান তখন তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল এবং কথা বলার মতো কোন শক্তি ছিল না। কিন্তু গুলশান আরার বড় ভাইয়ের সাথে আসিফ মাহমুদ মোবাইলে কথা বলার সময়ও তিনি সাইফুল ইসলামের গলার স্বর শুনতে পেয়েছেন। এতে গুলশান আরার দৃঢ় বিশ্বাস, সাইফুল ইসলামকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসিফ মাহমুদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা রক্ষী তারিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্র করে অগ্নিদগ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকেই স্ত্রী গুলশান আরার কাছে বলে আসছিলেন ইউএইচএফপিও ডাঃ আসিফ মাহমুদ তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করছে এবং তাকে বদলী করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি সে সাইফুল ইসলামের নিজ এলাকা মধুখালীতে গিয়েও তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর করেছে। গুলশান আরা এর কারণ জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম তাকে বলেছিলেন আসিফ মাহমুদ তাকে বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কাজের প্রস্তাব দিলে সে তাতে রাজী না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসব করছে। বিভিন্ন সময় তাকে দেখে নেয়ার হুমকিও দিয়েছে। বিষয়টি সাইফুল ইসলাম তার আত্মীয়-স্বজনদেরও জানিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে ইউএইচএফপিও ডাঃ আসিফ মাহমুদ নিরাপত্তা রক্ষী তরিকুল ইসলামকে তার পিছনে লেলিয়ে দেয়। তরিকুলের সাথে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং সে নিজেও সন্ত্রাসী কাজকর্মের সাথে জড়িত। তরিকুল বেশ কিছুদিন ধরে সাইফুল ইসলামের উপর নজরদারী করছিল এবং এ জন্য সাইফুল মন খারাপ করে থাকতো এবং স্ত্রী গুলশান আরার কাছে দুশ্চিন্তার কথা বলতো। এখন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা ও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কথা বলে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।