॥সোহেল মিয়া॥ চীন থেকে উৎপত্তি করোনাভাইরাস এখন বিশ্ব জুড়ে সবচেয়ে আতংকিত নাম। প্রতিদিনই হুহু করে বাড়ছে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫হাজার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন দেশে ২জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা পেতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও গ্রাম পর্যায়ে এখনো তার কোন প্রভাব পড়তে লক্ষ্য করা যায়নি।
গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে করোনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হলেও বাড়েনি সচেতনতা। বিদেশ থেকে দেশে ফিরেই যত্রতত্র ইচ্ছামতো ঘুরছে তারা। তাদের পরিবারের সদস্যরাও ঘুরে বেড়াচ্ছে জনসম্মুখে।
রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলাতেই এ চিত্র দেখা গিয়েছে। সরেজমিন বালিয়াকান্দি উপজেলায় এর সত্যতাও মিলেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা একাধিক পরিবার তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের সন্তানরাও যাচ্ছে স্কুলে।
গত দুই-তিন দিন আগে ভারত থেকে আসা একজন স্কুল শিক্ষক এবং দুবাই থেকে আসা অপর আরেক প্রবাসী বলেন, কি করবো ভাই। প্রয়োজনের তাগিদেই ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। আমরা জানি আমাদেরকে স্বেচ্ছায় ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে। কোন সমস্যা নেই।
এদিকে ভারত থেকে আসা একটি পরিবারের শিশু ১৪ দিন কোয়ারেন্টারে না থেকেই নিয়মিত স্কুলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন আমাদের সবারই উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিদেশ থেকে যারা বাড়িতে এসেছে তারা যেভাবে হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছা তাতে তো আমরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছি। আমরা বললেও তারা আমাদের কথা মানতে চাননা। তাই প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং আরো কঠোর হতে হবে।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, দেখুন এটি সচেতনতার একটি বিষয়। আইন করে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে আমরা নিজেরাই বিপদে পড়বো। তারপরো আপনারা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমরা পদক্ষেপ নিব।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, বিদেশ ফেরত মানুষগুলোর যত্রতত্র এভাবে ঘুরে বেড়ানো উচিত না। তাকে ১৪দিন স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিদেশ থেকে আসা মানুষদের বিশেষ নজরে রাখতে সকল নির্বাহী অফিসারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সব ইউএনওরা কাজ করছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিদেশ থেকে প্রত্যাগত কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আরোপিত কোয়ারেন্টাইনের শর্ত সঠিকভাবে প্রতিপালন করছেন না। অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সকলকে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ও নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছে। এর যে কোনো ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, আক্রান্ত দেশ থেকে যদি কেউ এসে থাকেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানের ১৪দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে আইইডিসিআর হটলাইনে ফোন করবেন। হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে ঃ ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১ ও ০১৯৩৭১১০০১১।