॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ১০ই মার্চ সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজবাড়ীসহ সারা দেশে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমসহ জেলার বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এতে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে অনেক দেশের নাগরিক আক্রান্ত হয়েছে। সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩জন, যারা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা করেছে। বিশ্বে যাই ঘটুক না কেন আমরা বর্তমানে আমরা অনেক ভালো আছি। যদি কারো মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায় তবে আতংকিত না হয়ে বা গোপন না করে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে বলবো সচেতন থাকার জন্য। আমরা সবসময় হেড বুলেটিন দিয়ে যাচ্ছি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের(আইইডিসিআর) মাধ্যমে সবসময় এই রোগ প্রতিরোধে কী কী করতে হবে সে সর্ম্পকে জনগণকে অবহিত করা হচ্ছে। সেগুলো অবশ্যই আমার নিজেরা অনুসরণের ব্যাপারে সচেতন থাকবো এবং পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনসহ পরিচিত সকলকে সচেতন করবো। এ বিষয়ে সরকার থেকে যে সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রদান করা হবে সেটা অবশ্যই সকলকে মেনে চলতে হবে। তবেই আমরা আমাদের দেশটাকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবো।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, সবাইকে অনুরোধ করবো, হাঁচি-কাশি এলে আপনারা হাতের তালুতে না নিয়ে কনুয়ের মাধ্যমে হাঁসি-কাশি প্রদান করুন। যত আপনজনই হোক না কেন কারো সঙ্গে হাত মেলানো, কোলাকুলি করা বা কাউকে জড়িয়ে ধরা থকে বিরত থাকুন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। কখন কার মধ্যে যে এই রোগ আছে, কার মাধ্যমে চলে আসে-এটা কেউ বলতে পারে না। যেখানে-সেখানে থু থু, ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদেরকে অবশ্যই নিজের পরিবারের স্বার্থে কমপক্ষে ১৫দিন কারো সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি এই ১৫দিনে শরীরে করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন, যাতে তৎক্ষণাৎ আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১১৪টির বেশী দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস(কোভিড-১৯) বাংলাদেশে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বক্তব্যের শেষে তিনি ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচীর আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং রাজশাহী, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলার জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নবনির্মিত সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেন এবং ঐ সকল জেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার বক্তব্যের শেষে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের সকলকে অবশ্যই করোনা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য জেলায় যারাই বিদেশ থেকে আসবেন তাদেরকে অবশ্যই ১৫দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, যাতে সে, তার পরিবারসহ সকলে ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকে। আগামী ১৭ই মার্চ জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকী ও ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের সকল অনুষ্ঠান, যেগুলোতে অনেক লোকসমাগম হয় সে ব্যাপারে সরকারী নির্দেশনা যেভাবে আসবে সেভাবে পালন করা হবে।
এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ সালাহ উদ্দিন, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফকরুজ্জামান মুকুট, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন উদ্দিন বতু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠানে জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও করোনা ভাইরাসসহ সকল ধরণের রোগ ও মুযোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য মহান আল্লাহ্র দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।