॥নিউইয়র্ক প্রতিনিধি॥ গতকাল শনিবার সকালে(স্থানীয় সময়) জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ইউনেস্কো’র ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের উপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠাটি শুরু করা হয়। এরপর জাতির পিতা, বঙ্গমাতা, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডে নিহত জাতির পিতার পরিবারের সদস্যগণ, মুক্তিযোদ্ধা, দু’লাখ নির্যাতিত মা-বোন ও ভাষা শহীদসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
জাতির পিতার ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ একটি জাতিকে কীভাবে বজ্রকঠিন ঐক্যের পতাকাতলে সমবেত করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণে উজ্জ্বীবিত করেছিল তা উঠে আসে রাষ্ট্রদূতের স্বাগত বক্তব্যে।
স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, “ইউনেস্কো কর্তৃক জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি একদিকে যেমন পৃথিবীর মানুষকে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও আমাদের মুক্তিসংগ্রাম সমন্ধে জানার সুযোগ করে দিয়েছে অপরদিকে কালোত্তীর্ণ এই ভাষণটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ন্যায় ও মুক্তির পথে উজ্জ্বীবিত করছে”।
তিনি আরও বলেন, এই ভাষণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা জোগাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার।
আলোচকগণ এই ভাষণের প্রেক্ষাপট, বিষয়বস্তু, সুদূর প্রসারী প্রভাবের উপরও আলোকপাত করেন। জাতির পিতার এই ভাষণে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একজন সুযোগ্য রাষ্ট্রনায়কের সুচিন্তিত কৌশলের সবটুকুই প্রতিভাত হয়েছে মর্মে মন্তব্য করেন বক্তাগণ। ৭ই মার্চের ভাষণ যাতে সর্বদা দীপ্যমান থাকে এবং জাতির পিতার সম্মোহনী দরাজ কন্ঠ যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুরণিত হয় সেজন্য নতুন প্রজন্মকে ভাষণটি বার বার শোনানোর আহ্বান জানান আলোচকগণ।
আলোচনা শেষে ঐতিহাসিক এই ভাষণ নিয়ে লেখা কবি নির্মলেন্দু গুণের বিখ্যাত কবিতা “স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো” আবৃত্তি করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর ইউনেস্কো, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতার দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত করে।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মিশনের মিনিস্টার ও হেড অব চ্যান্সারি মোহাম্মদ নূরে আলম।