॥আশিকুর রহমান॥ এক সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচা খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেনের গোপালগঞ্জের বাড়িতে গৃহপরিচারকের কাজ করতেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতলা গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবু।
এছাড়া তিনি কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতেও। আজও বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলো তাড়া করে ফেরে হাবুকে। প্রায়ই স্বপ্ন দেখেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এসেছেন তার বড়িতে।
গতকাল ৭ই মার্চ দুপুরে দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সঙ্গে আলাপ হয় হাবিবুর রহমান হাবুর। তিনি বলেন, ‘১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর চাচাতো দুলাভাই ক্যাপ্টেন বদর উদ্দিন জামানের মাধ্যমে আমার সেজ ভাই আবুল(হাবুল) বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে গৃহপরিচারকের কাজ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে আমার সেজ ভাই আমাকে নিয়ে কাজে লাগিয়ে দেন বঙ্গবন্ধুর চাচা শেখ মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে। তখন আমার বয়স ছিলো ১২বছর। বঙ্গবন্ধু তো ঢাকায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে তিনি গ্রামের বাড়িতে যেতেন। ওই বাড়িতে কাজ করার সুবাদে আমি বঙ্গবন্ধুকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারন করে হাবু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ কবির হোসেনের বিয়েতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেসময় বঙ্গবন্ধুর ওই বাড়িতে আমি একটানা ১৮ দিন কাজ করেছি। অনুষ্ঠানের দিন আমি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে খাবার টেবিলে বসে ছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু পাশেই ছিলেন। হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর চাচাতো দুলাভাই ক্যাপ্টেন বদর উদ্দিন জামান বঙ্গবন্ধুর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ক্যাপ্টেন বদর উদ্দিন জামান বঙ্গবন্ধুর কাছে আমার ভাইয়ের নাম ধরে বললেন এটা হাবুলের ছোট ভাই; ওর নাম হাবু। তখন বঙ্গবন্ধু হেসে দিয়ে বললেন, হাবুল তো কালো, কিন্তু ওর ভাইটা তো ভালোই ফর্সা। এরপর বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে আমাকে একটি প্লেট ভরে মিষ্টি দিয়ে খাইতে বললেন। আমি বললাম আমিতো কেবলই খাইছি এতো মিষ্টি তো খাইতে পারবোন না। তখন বঙ্গবন্ধু হেসে দিয়ে বললেন, না তুমি যা পারো তাই খাও। পরে আমি কাটা চামচ দিয়ে একটা মিষ্টির অর্ধেক খাইলাম। বঙ্গবন্ধুর এই স্মৃতিটা আমি কোনদিনও ভুলতে পারবো না।’
হাবু বলেন, ‘আমরা দুই ভাই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যের মতোই ছিলাম। যে ১৮ দিন ধানমন্ডির বাড়িতে ছিলাম তখন কাজের ফাঁকে আমি শেখ রাসেলের সঙ্গে খেলতাম। রাসেলের বয়স তখন ৪/৫ বছর হবে। রাসেলকে কোলে করে রাখতাম। ১৮ দিন সেখানে থাকার পর আবার বঙ্গবন্ধুর গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় চলে আসি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কখনো দেখা হয়েছে কি না। এমন প্রশ্নে হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, ‘ওনারা দুই বোন তো বিদেশে থাকতেন। আর গ্রামের বাড়িতেও বেশি আসতেন না। তাই আমার সাথে ওনাদের দেখা হয় নাই। তবে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তো অবশ্যই তাদের সাথে আমার দেখা হতো। বঙ্গবন্ধু মারা না গেলে আমরা দুইভাই আজও শেখ পরিবারের সাথেই থাকতাম।’
শেখ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন কিভাবে? হাবিবুর রহমান বললেন, ‘৭৫ এর ১৫ই আগস্টের কয়দিন আগে আমরা দুই ভাই টুঙ্গিপাড়া থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসি। এরপরই তো যা কল্পনা করিনাই তাই ঘটে গেল। পরে আর ভয়ে আমরা যাই নাই। ছোট ছিলাম, বয়স কম ছিলো। ভয় কাজ করতো মনে। এভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। পরে অবশ্য ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর চাচা শেখ জাকিরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। সেসময় তিনি পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। কিছু সাহায্য সহযোগীতাও করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারে সাথে কাটানো স্মৃতি আমরা দুই ভাই কোনদিনও ভুলতে পারবোনা। তাদের বাড়িতে কাজ করলেও আমরা তাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ছিলাম। এখনো আমি মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধুকে স্বপ্নে দেখি। একদিন স্বপ্ন দেখলাম বঙ্গবন্ধু আমার বাড়িতে এসেছেন। তাছাড়া প্রায়ই আমি স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও স্বপ্নে দেখি।’
তিন ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানের জনক হাবিবুর রহমান হাবু বর্তমানে কখনো রিকশা চালিয়ে কখনোবা মানুষের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার জীবনে এখন একটাই চাওয়া সেটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একবার দেখা করা।
এ প্রসঙ্গে হাবু বলেন, ‘আমার জীবনে একটাই আশা আছে আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। যেহেতু আমি বঙ্গবন্ধুকে মাঝে মধ্যেই স্বপ্নে দেখি, শেখ হাসিনাকেও স্বপ্নে দেখি। শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার মাধ্যমে আমার এই স্বপ্নটা যাতে বাস্তব হয়। এটাই আমি চাই।’