॥এম.এইচ আক্কাস/মাহফুজুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বাহাদুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দ্বিতীয় পর্যায়ে ফের তদন্ত শুরু হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে গতকাল ৫ই মার্চ সকালে জেলার পাংশা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পঙ্কজ কুমার বিশ্বাস সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে তদন্তকার্য পরিচালনা করেন।
এরআগে বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের জনৈক রফিকুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২রা অক্টোবর গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান খান সরেজমিনে বাহাদুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করলেও স্থানীয় তদবীরে তিনি দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করে অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গোয়ালন্দ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল মালেককে অবহিত করলেও তিনি প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিদায়ী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার মিয়া এবং এলাকাবাসী পৃথক ভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্র্নীতি ও অনিয়মের বিশদ বর্ণনা দিয়ে জেলা লিখিত অভিযোগ করেন।
এরপর রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের শিক্ষা অফিস থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তের জন্য পাংশা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়।
একাধিক লিখিত দরখাস্তে প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের টাকা আত্মসাত, ২০১৮-১৯ সালের বিদ্যালয়ে বরাদ্ধকৃত স্লিপের টাকা আত্মসাত, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সমাজসেবকের দেয়া অনুদানের ৫০হাজার টাকা আত্মসাত, নিজ বাড়ীতে কোচিং ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁস, ক্লাসে না গিয়ে স্কুলে তার অফিসে বসে মোবাইলে ফেসবুক দেখাসহ নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয় ওইসব লিখিত অভিযোগে।
গতকাল ৫ই মার্চ সকালে পাংশা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পঙ্কজ কুমার বিশ্বাস কর্তৃক তদন্তকালে অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার মিয়া প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, প্রধান শিক্ষক ফরিদার আক্তার কমিটির কারো তোয়াক্কা না করে নিজেই স্লিপ কমিটির টাকা সামান্য কিছু ব্যয় করে বাকী টাকা তিনি নানা ধরনের বিল ভাউচার তৈরী করে আত্মসাৎ করেছে। গত বছর বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে সংসদস্যের আগমনের নামে ৫০/৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করে তিনি সে টাকার কোন হিসাব দেননি। তাছাড়া তিনি বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ফেসবুকে চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার মিয়া আরো বলেন, স্থানীয়ভাবে একই বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪বছর চাকুরী করার সুবাদে প্রধান শিক্ষক ফরিদার আক্তার স্কুলে অভ্যন্তরে সিন্ডিকেট তৈরী করে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে চলেছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ পূর্বক তাকে এ বিদ্যালয় থেকে বদলীর দাবী জানান।
তদন্তকালে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। ওই বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার মেয়েকে প্রশ্ন পত্রের সাথে মিল করা উত্তর পত্র সরবরাহ করা হয়েছিল।
পাংশা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পঙ্কজ কুমার বিশ্বাস তদন্তকালে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক ও বর্তমান সদস্য ও সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য নেন। এরপর বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের কাছেও মৌখিকভাবে জানতে চান।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকগণের উপস্থিতিতে জিয়ারুল হক বাবলু ও সেতারা বেগমসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে সাবেক সভপতি আবুল বাসার মিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।
তদন্তের বিষয়ে পাংশা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পঙ্কজ কুমার বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তের সময় শিক্ষক পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয়দের লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুলে তদন্তের শেষ পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ইতিপূর্বে প্রথম তদন্তের পর গত ৩রা অক্টোবর হঠাৎ তিনি অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।