॥স্টাফ রিপোর্টার॥ চীন থেকে ছড়ানো নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে দেশটিতে ভ্রমণে বাংলাদেশীদের বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। গত ২৩শে জানুয়ারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া এক প্রেস নোটে চারটি সতর্কতা কথা বলা হয়েছে।
নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশির লক্ষণ থাকার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ভ্রমণের সময় বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ থেকে চীনে গেলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ৪টি ব্যবস্থার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ঃ ১। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে দুই হাত দূরে থাকতে হবে।
২। বার বার প্রয়োজন মতো সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন এলাকা ভ্রমণ করলে এই সতর্কতা নিতে হবে।
৩। জীবিত ও মৃত গবাদি পশু/বন্য প্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪। ভ্রমণকারী আক্রান্ত হলে হাঁচি/কাশির সময় দূরত্ব বজায় রাখা, মুখ ঢেকে হাঁচি/কাশি দেয়া ও যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা।
প্রেস নোটে জানানো হয়, এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে তার জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশে প্রবেশের সব পথে করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কেউ জ্বর নিয়ে দেশে ঢুকছে কিনা তা সনাক্ত করতে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি প্রবেশ পথে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে ভ্রমণকারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ ধরনের রোগীদের আলাদা করে চিকিৎসার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যা জানা গেছে ঃ ১৯৬০ সালে প্রথম করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাসের মধ্যে মানুষে সংক্রমিত হয় ৭টি ভাইরাস। এই ভাইরাস বিভিন্ন প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় কিন্ত এখন পর্যন্ত সংক্রমণের নির্দিষ্ট উৎস বের করা সম্ভব হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জ্বর, কাশি ও মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
উল্লেখ্য, চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো ৮৩০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সরকার একথা জানায়। খবর এএফপি’র।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, কর্তৃপক্ষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে এমন এক হাজার ৭২ জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান নগরীতে প্রথম এ ভাইরাস দেখা দেয়।
এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন ঘোষণা দেয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুর বর্ধিত এ সংখ্যা প্রকাশ করা হলো।
এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে চীন উহান ও এর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি নগরীর প্রায় ২ কোটি মানুষকে কার্যকরভাবে আলাদা করে রাখা হয়েছে এবং বেইজিং দেশব্যাপী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছে। কেননা, নতুন চন্দ্র বর্ষের ছুটির জন্য এ সপ্তাহে কোটি কোটি লোক ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ভ্রমণ শুরু করেছে।
জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গত বৃহস্পতিবার এ ভাইরাসে নতুন করে ৮জনের মৃত্যু এবং দেশব্যাপী আরো ২৫৯ জনের নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ায় এ সংখ্যা সংশোধন করা হয়।
তারা আরো জানায়, মোট আক্রান্ত ৮৩০ জনের মধ্যে ১৭৭ জনের অবস্থা আশংকাজনক। এছাড়া ৩৪ জন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে ওঠায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত এ ভাইরাস উহানের সামুদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়।
তবে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়ে চীনের বাইরে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। এর আগে চীনের বাইরে থাইল্যান্ড ও জাপানে ৩জনের সংক্রমণের খবর মিলেছিল। এখন সুদূর মার্কিন মুলুকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন এক ভারতীয় মহিলাও। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে আশ্চর্যজনক এক তথ্য। চীনের দুই প্রজাতির সাপ থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।