॥হেলাল মাহমুদ/ইউসুফ মিয়া॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলামের সোনাপুর মোড়ে অবস্থিত ‘আদর্শ ডেইরী ফার্ম’ নামক পরিত্যক্ত গরুর খামারে দুর্বৃত্তদের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
তবে হামলার সত্যতা নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা এটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো নাটক বলে অবিহিত করেছেন।
এ ব্যাপারে কালুখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম গত ২১শে জানুয়ারী অজ্ঞাতনামা ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কালুখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২০শে জানুয়ারী বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১৫/১৬ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলযোগে এসে খামারের গেট ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করে। তারা খামারের অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি নামিয়ে ভাংচুর ও পদদলিত করে অফিসের ৪টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে ৩টির মনিটর ও ডিভিআর লুট করে নিয়ে যায় এবং অন্যান্য সিসি ক্যামেরা ও তার যন্ত্রাংশ এবং অফিসের সমস্ত আসবাবপত্র ভাংচুর করে অফিসে রক্ষিত ২৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন, কেয়ারটেকারের থাকার ঘর হতে ৪২শত টাকা, ১টি টাচ মোবাইল ফোন ও চার্জার টর্চ লাইট নিয়ে যাওয়াসহ চুলা ও অন্যান্য মালামাল ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী খামারে ভাংচুর ও লুটপাট করাকালে কেয়ারটেকার আঃ খালেক জোয়ার্দ্দার পাশের আবেদার বাড়ীর তাল গাছের নীচে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখে। সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভাংচুর ও লুটপাটের ফলে খামারের প্রায় ১লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল ২২শে জানুয়ারী সরেজমিনে কাজী সাইফুলের ‘আদর্শ ডেইরী ফার্ম’ নামক খামার পরিদর্শনকালে খামারের কেয়ারটেকার আঃ খালেক জোয়ার্দ্দার বলেন, ঘটনার সময় আমি খামারে ছিলাম না। খবর পেয়ে খামারে আসার সময় লোকজন আমাকে বলে, ওখানে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। তুমি গেলে তোমাকে মারবে। তখন আমি ভয়ে আর খামারে যাইনি। পরে গিয়ে দেখি সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাংচুরসহ আমার নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, চার্জার টর্চ লাইট নিয়ে গেছে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ শেখ, রুবেলসহ কয়েকজন কাজী সাইফুল ইসলাম ও তার কেয়ারটেকারের বক্তব্যের বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করে বলেন, ‘ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। তারা নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে স্থানীয় মানুষ জানতো এবং দেখতে আসবে, কিন্তু কেউই আসেনি। এছাড়া যেভাবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ফেলে রাখা হয়েছে তা দেখেও ঘটনাটি সাজানো নাটক বলে মনে হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য খায়রুল ইসলাম খায়ের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পাশাপাশি দলীয় পদ হারানোর কারণে কাজী সাইফুল রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ কাজ করেছে।
তিনি আরো বলেন, গরুর ফার্মে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকে কী করে? সেটাতো কোন দলীয় কার্যালয় নয়। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর ও পদদলিত করার ঘৃণ্য নাটক করায় তার শাস্তি হওয়া উচিত। তাছাড়া সে অনেক আগেই ওই ফার্মের সকল গরু বিক্রি করে দিয়েছে। গরু বিক্রির সময়ই সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রও নিয়ে গেছে। খামারটি বর্তমানে পরিত্যক্ত রয়েছে। আমার বিশ্বাস অসৎ উদ্দেশ্যে সে এই নাটক সাজিয়েছে।’
সাবিনা বেগম নামে খামারের পার্শ্ববর্তী এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঘটনার সময় মোটর সাইকেলযোগে কয়েকজন এসে আমার মেয়ের কাছে খামারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলে সে ভয় পেয়ে বাড়ীতে চলে আসে। পরে শুনেছি তারা ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।’
খামারের মালিক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন. কেয়ারটেকারের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে এ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কালুখালী থানার ওসি’কে অবগত করি। পরে খামারে গিয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দেখে ও খোঁজ-খবর নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এ বিষয়ে কালুখালী থানার ওসি’র দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি জানানোর পর আমি থানা থেকে লোক পাঠিয়েছিলাম। তারা ঘটনার ক্লু খোঁজার চেষ্টা করছে। গতকাল বুধবার লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’