॥সোহেল মিয়া/হেলাল মাহমুদ॥ একের পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটিয়েও রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন সড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হইলার মাহেন্দ্র গাড়ীর দাপট কমছে না।
সম্প্রতি ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর বড়ব্রীজ এলাকায় গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাসের সাথে সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ ৫জন মাহেন্দ্র যাত্রীর মৃত্যুর রেশ না কাটলেও এখনো জেলার সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে চলাচল করছে মাহেন্দ্র। এতো বড় দুর্ঘটনার পরও রহস্যজনকভাবে তারা বহাল তবিয়তে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ পাচ্ছে।
হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে হাইওয়ে পুলিশের সামনেই তারা চলাচল করছে।
মাহেন্দ্র চালকরা জানিয়েছেন, হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা গাড়ী চালাচ্ছেন।
অপরদিকে ম্যানেজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে হাইওয়ে থানা পুলিশ বলছে, প্রতিদিনই মহাসড়ক থেকে মাহেন্দ্রসহ অন্যান্য অবৈধ যানবাহন আটক করা হচ্ছে। তারপরও তাদেরকে থামানো যাচ্ছে না।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার আহলাদীপুর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, তাদের আওতায় রাজবাড়ীর ২৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের আহলাদীপুর হাইওয়ে থানা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৪কিলোমিটার, দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এবং রাজবাড়ীর বড়পুল পর্যন্ত ১১কিলোমিটার রয়েছে। মহাসড়কের এই ২৮কিলোমিটার জুড়েই দীর্ঘদিন ধরে মাহেন্দ্রসহ অন্যান্য অবৈধ যানবাহন চলছে।
বিআরটিএ’র রাজবাড়ী সার্কেলের সহকারী পরিচালক লিটন বিশ্বাস বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের ২১টি জেলার মহাসড়কের উপর দিয়ে মাহেন্দ্রসহ অবৈধ ছোট যানবাহন চলতে পারবে না। তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলাও রয়েছে। রাজবাড়ীতে যে সকল মাহেন্দ্র চলাচল করছে তার কোনটিরই হালনাগাদ নিবন্ধন ও রুট পারমিট নেই। ফলে এ সকল যানবাহন সম্পূর্ণ অবৈধ।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ডের সাথেই মহাসড়কের পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে যাত্রী ওঠানোর জন্য অপেক্ষা করছে ৩০-৪০টি মাহেন্দ্র। মাহেন্দ্রগুলোতে সিরিয়াল মতো যাত্রী উঠিয়ে দিচ্ছে মাহিন্দ্র মালিক পক্ষের আইয়ুব হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এ সকল মাহেন্দ্র চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করে কে-জানতে চাইলে আয়ুব হোসেন মালিক পক্ষের আলমগীর সেখ, সিদ্দিক, গোয়ালন্দের আকবর ফকীর ও জুয়েল এবং শ্রমিক ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর, বাদল ও গোয়ালন্দের আজিজ মোল্লার নাম বলেন।
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কীভাবে মহাসড়কে চলছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন মাহেন্দ্র চালক বলেন, আমরা হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই মহাসড়কে চলি। আমাদের যারা মালিক ও শ্রমিক পক্ষ রয়েছে তারা সেটি দেখাশোনা করে।
আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, মাহেন্দ্রসহ অবৈধ যানবাহন যাতে মহাসড়কে চলতে না পারে সেটা আমাদের নজরদারীতে রয়েছে। প্রতিদিনই আমরা মহাসড়ক থেকে এ ধরণের অবৈধ যানবাহন আটক করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এ সময় তিনি মহাসড়কে দিনের বেলা কোন অবৈধ যানবাহন চলাচল করে না বলে দাবী করেন। তাহলে দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়কের পাশে মাহেন্দ্র স্ট্যান্ড কেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমাদের দেখার বিষয় না।
ম্যানেজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ধরণের কাজের সাথে হাইওয়ে পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমরা প্রতিদিনই মহাসড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন আটক করছি।