॥চঞ্চল সরদার॥ বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গী হয় না। আমরা ধারণা করে থাকি যারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তারা জঙ্গী হয়। এটা ঠিক না। যাদের জঙ্গী হিসেবে দেখছি তারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করা, তারাই জঙ্গী হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল ১৫ই জানুয়ারী বিকালে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সের ড্রিলশেডে জেলা পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম আয়োজিত ‘মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী এবং কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ক’ সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান আরো বলেন, আমরা জঙ্গীদের মধ্যে মাদ্রাসার যে ছাত্রদের পেয়েছি সেই সংখ্যা একেবারেই কম। উচ্চ শিক্ষিত এবং বাংলা, ইংরেজী স্কুলে যারা পড়ালেখা করে সেই সব ছাত্ররাই জঙ্গীবাদের দিকে বেশী যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে চলমান যে জঙ্গী রয়েছে তারাই নতুন নতুন জঙ্গী রিক্রুট করে থাকে। তাই বাবা, মা ও শিক্ষকদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে জঙ্গী হওয়া থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার ব্যাপারে। জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল। ইউরোপের কান্ট্রিগুলো থেকে আমাদের কাছে জানতে চায় কীভাবে আমরা জঙ্গী দমন করি, কীভাবে নিধন করি। কীভাবে ধরি সেই জন্য তারা আমাদের পুলিশের কাছে আসছে। ইন্টারপোল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের কাছে শিখতে চায় কীভাবে আমরা জঙ্গী ধরি। জঙ্গীবাদে কেউ যেন জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আপনারা পুলিশকে যে কোন অপরাধীর বিষয়ে তথ্য দিবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস নাই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকতে পারে। সেটা যদি পুলিশের কানে আসে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। মাদক আছে এবং ব্যাপকভাবেই আছে-সেটা আমাদের ভয়ের কারণ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব শুধু পুলিশের না, অন্যান্য বিভাগও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আছে। তাদের দায়িত্ব মাদক নিয়েই কাজ করা। কারা বিক্রি করছে, পাচার করছে সেটা ধরা তাদের কাজ। র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডেরও কাজ মাদক ধরা। প্রতিনিয়তই মাদক ধরা পড়ছে। ইয়াবা ও ফেনসিডিল-এই দুই মাদক আমাদের দেশে তৈরী হয় না। পার্শ্ববর্তী ২টি দেশ থেকে আসে। সব সংস্থা একসাথে কাজ করার পরও মাদক যে আমরা খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারবো-ব্যাপারটা তেমন না। যদি মাদকের চাহিদা থাকে তাহলে সাপ্লাই হবেই। যদি আমরা চাহিদা কমাতে পারি তাহলে মাদকের ভয়াবহতা কমাতে পারবো। আমরা দেখেছি ৯ম-১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও মাদক সেবন করে। এ জন্য পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, স্থানীয় রাজনীতিকসহ সবারই দায়িত্ব রয়েছে। সন্তানদের দিকে যদি আমরা একটু নজর দেই, বিনোদন দেই তাহলে মাদক থেকে তাদেরকে দূরে রাখা যাবে। মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের ফিরিয়ে আনতে সকলেই দায়িত্ব রয়েছে। সকলে মিলে কাজ করলে আমরা মাদক রোধ করতে পারবো। মাদক কারা বিক্রি করে, পাচার করে তাদের সম্পর্কে আপনারা পুলিশকে তথ্য দিন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পুলিশকে তথ্য দিলে সেটা গোপন রাখা হবে, সে বিষয়ে আপনারা নিশ্চিন্তে থাকবেন। সকলে মিলে কাজ না করলে মাদক নির্মূল করা যাবে না। শুধু পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, উকিল, মুক্তিযোদ্ধা নয়-সবাই মিলে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের দেশকে তৈরী করবো।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, নাজিরগঞ্জ-ধাওয়াপাড়া নৌরুটে বর্ষা মৌসুমের সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী নৌকা নিয়ে এই পাশে এসে ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। এটা প্রতিবছর ঘটে থাকে। গোয়ালন্দ ঘাটে কিছু ছেলেপেলেদের কারণে সমাজ নষ্ট হচ্ছে, সেগুলো দেখতে হবে। সাংবাদিক রিয়াজুল করিমের উপর আক্রমন করা হয়েছে। রাজবাড়ীতে সাংবাদিকের উপর আক্রমনের ঘটনা আগে কিন্তু কখনো ঘটে নাই। আমি ডিআইজির কাছে অনুরোধ জানাবো এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তারা ছাত্রলীগের-যুবলীগের, ছাত্রদলের-যুবদলের যারাই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সরকার মিডিয়ার যতো স্বাধীনতা দিয়েছে তা অন্য কোন সরকার দেয়নি। সরকার মুজিববর্ষ পালনের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। গোয়ালন্দে ও সদরে সিসি ক্যামেরা দেওয়ায় অনেক ভালো হয়েছে। এখন কোন স্থানে কী হচ্ছে সেটা ঘরে বসে দেখা যাবে। এতে অপরাধ কমে যাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সকলে মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম-বার বলেন, রাজবাড়ী সদরে ৭২টি, দৌলতদিয়া ঘাটে ৮টি ও গোয়ালন্দ মোড়ে ৭টিসহ মোট ৮৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এটা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ডাকাতি, চুরিসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করবে। যেখানে যেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে তার মাধ্যমে সেইসব স্থানে মনিটরিং করতে পারবো কোথায় কী হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধ কমবে বলে আমরা আশাবাদী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, অন্যান্যের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, রাজবাড়ী থানা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী ও ফ্রান্স প্রবাসী ব্যবসায়ী মোঃ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) মোঃ ফজলুল করিম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিআইজি হাবিবুর রহমান অতিথিদের সাথে রাজবাড়ী সদরে জেলা পুলিশের স্থাপিত ৭২টি সিসি ক্যামেরা উদ্বোধন করেন। পরে একই স্থানে মুজিববর্ষের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা পুলিশ আয়োজিত নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।