॥সুশীল দাস॥ আগামীকাল ১১ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে রাজবাড়ী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের আয়োজনে গতকাল ৯ই জানুয়ারী বেলা ১১টায় সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের সাথে ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা(অবহিতকরণ সভা) অনুষ্ঠিত হয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকারের সভাপতিত্বে সভায় পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান। অন্যান্যের মধ্যে জেলা পুষ্টি সমন্বয়কারী নাজনীন সুলতানা, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল কুদ্দুস বাবু, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় রাজবাড়ী জেলা পর্যায়ে কর্মরত ৪০জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, এ বছর রাজবাড়ী জেলায় ১০৭৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬-১১ মাস বয়সী ১৫ হাজার ৫২৯ জন শিশুকে ১লক্ষ আইইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি করে নীল রঙের এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৮৭৫ জন শিশুকে ২ লক্ষ আইইউ ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ২ হাজার ১৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবী, ৩৯৩ জন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী ও ৫২৪ জন তদারককারী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনকালে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, ভিটামিন ‘এ’ মানবদেহে তৈরী হয় না। খাবারের মাধ্যমে (প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ) গ্রহণ করতে হয়। প্রাণিজ খাবারের মধ্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজার মধ্যে এবং উদ্ভিজ্জ খাবারের মধ্যে পাকা হলুদ ফল ও রঙিন শাক-সবজিতে বেশী ভিটামিন ‘এ’ থাকে। খাবারের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করলে তা শরীরে জমা থাকে, দ্রবীভূত হয়ে বের হয়ে যায় না। ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখে। ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। ভিটামিন ‘এ’র অভাবে বাচ্চাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়। গর্ভাবস্থায় অভাব হলে বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রাতকানা রোগ দিয়ে শুরু হয়, তারপর ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। চোখের মধ্যে স্পট(দাগ) পড়ে, তারপর আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ কণিয়া নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন ‘এ’র অভাবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য জাতীয়ভাবে বছরে দুইবার করে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ভিটামিন ‘এ’ অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে শিশুদের রক্ষা করে, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও জটিলতা এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত সমস্যা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বছরে দুইবার করে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন করে থাকে। সারা দেশে একই সময়ে প্রোগ্রামটা হয়ে থাকে। তবে ১১ই জানুয়ারীর প্রোগ্রামটা ২০১৯ সালের ২য় রাউন্ড। কারণ নানা কারণে আমরা যথাসময়ে প্রোগ্রামটি করতে পারিনি। ২০২০ সালে যথারীতি আমাদের আরও ২টি প্রোগ্রাম হবে। এই ক্যাম্পেইনে আমাদের টার্গেট থাকবে একটি বাচ্চাও যেন বাদ না পড়ে। স্বাস্থ্য বিভাগ কাজটি করে ঠিকই, তবে সফল করতে সবারই দায়িত্ব আছে। জেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে কেন্দ্র করা আছে। জাতীয়ভাবে প্রচারণাতো আছেই। স্থানীয় মিডিয়াতে বিষয়টি ভালোভাবে প্রচার করলে সকলে জানতে পারবে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ক্যাম্পেইনের নাম এ ‘প্লাস’ হওয়ার কারণ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর পাশাপাশি বাচ্চাদের অভিভাবকদের নানা পরামর্শ/ম্যাসেজ দেয়া হয়। যেমন-জন্মের পরপরই নবজাতককে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়ানো, ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ ছাড়া পানি, মধু, মিসরির শরবত বা এ জাতীয় কোন কিছু না খাওয়ানো, ৬ মাস বয়স হওয়ার পর ঘরে তৈরী সুষম খাবার খাওয়ানো, ২বছর পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো প্রভৃতি। রাজবাড়ী জেলাতে আমরা হান্ড্রেড পার্সেন্ট(শতভাগ) বাচ্চাকেই এই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে চাই। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করছি।