বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

আজ ২১তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হচ্ছে॥আওয়ামী লীগের পথপরিক্রমা রোজগার্ডেন থেকে গণভবন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ ২০শে ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের শ্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে প্রায় ৭হাজার কাউন্সিলর অংশ নেবেন। ২১শে ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনকে নির্বিঘেœ করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।
২১তম সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়া, মঞ্চ ও সম্মেলনস্থল প্রস্তুত করা এবং সাজসজ্জাসহ অন্যসব কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। এবার বিদেশী অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
আওয়ামী লীগের পথপরিক্রমা রোজগার্ডেন থেকে গণভবন ঃ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন এবং বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানে বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস। এ রাজনৈতিক দলটি এদেশের সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ দলটির নেতৃত্বেই এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজগার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে বেড়িয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক।
১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির একচ্ছত্র নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক।
৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সূচিত হয়, সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ এবং এই আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩রা নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলের মধ্যে ভাঙনও দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশক ধরে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তিন বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে দলটি।
আবার ৬৭ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫বছর, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা সুসংহত হতে সক্ষম হয়ে জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি। কিন্তু এই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারীর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবারো নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতারা গ্রেফতার এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম।
তবে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারী গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
পরে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হন।
নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে দলটি।
জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন যারা ঃ প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। আর আজ ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২১তম জাতীয় সম্মেলনের। অতীতের সম্মেলনগুলোতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যনির্বাহী কমিটি পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছেন শত শত নেতা। তবে এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন ৭জন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ ৮বার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৩বার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ২বার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল ১বার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন একবার নির্বাচিত হয়েছেন দলের আহ্বায়ক।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন। সবচেয়ে বেশি ৪বার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ ৩বার, আবদুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ২বার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, আবদুল জলিল এবং ওবায়দুল কাদের একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩শে অক্টোবর দুই দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু দেশের পুরনো ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, এটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের মূলধারাও। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের সমাজ-রাজনীতির এ ধারাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই এই দলের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ প্রথম শুরু করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন।
২১তম জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। আমাদের অবিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের কাজে-কর্মে এবং ব্যবহারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত দল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন ও পুরনোদের নিয়ে দলের আগামী কমিটি হবে আধুনিক ও সুসংগঠিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ অপরিহার্য নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!