॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় নদী ভাঙনের শিকার হওয়া ফেরী ঘাটে বাঁশ ও বাঁশের মাচা দিয়ে এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভাঙনের পর ৩মাস পেরিয়ে গেলেও ঘাটগুলো এখনো সচল করা সম্ভব হয়নি। ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই ঘাটগুলোর নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি ঘাট নির্মিত হওয়ার মাত্র আড়াই বছর পরই নদী ভাঙনের শিকার হয়।
জানা যায়, গত বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে ৩টি ফেরী ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঘাটগুলোর এ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরী করে যানবাহন পারাপারের উপযোগী করে তোলার জন্য ৭০ লক্ষ টাকা কন্ট্রাক্টে মেসার্স ডালাস ইন্টারন্যাশনাল নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। চুক্তির মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার পর চলতি ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত ওই ঘাটগুলো মেরামতের দায়িত্ব তাদেরই পালন করতে হবে। তাই তারা ঢিমে তালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ দ্রুত ঘাট চালু করে যানবাহন পারাপার শুরু হলে তাদেরই ভাঙ্গাচোরা মেরামত করতে হবে। তাই তারা অল্প লেবার দিয়ে ধীরে ধীরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আরো জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়া কার্যালয় থেকে যে কোন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার দেখিয়ে নিজেরাই কাজ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের আলাদা চুক্তি করা থাকে।
গত শুক্র ও শনিবার সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, ১নং ফেরী ঘাটের উঁচু রাস্তা ভেকু দিয়ে কেটে ডাইবিশন তৈরী করে নি¤œমানের ইট প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ঢালু বরাবর ফেলা হয়েছে। তার উপর বাঁশের মাঁচা পেতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এ সময় ১৫/২০ শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। এ সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডালাস ইন্টারন্যাশনালের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মেসার্স বেলাল এন্টারপ্রাইজ নামে অপর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মরত বেলাল হোসেন নামের একজন ম্যানেজারকে পাওয়া যায়।
বেলাল হোসেন জানান, তার মালিক মেসার্স ডালাস ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে এ কাজ করছে। ২নং ফেরী ঘাটে দেখা যায়, এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ করে তার মাথায় একটি পন্টুন বসানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ঘাটটি সচলের দাবী করলেও তাতে যানবাহন পারাপার হতে দেখা যায়নি।
এ সময় আব্দুল মালেক ও জব্বার নামের দুইজন ট্রাক চালক বলেন, এই ঘাটগুলো যেভাবে ঢালু করে তৈরী করা হচ্ছে তাতে মাল বোঝাই ট্রাকগুলোকে ফেরী থেকে ঢালু বেয়ে উপরে উঠতে মুশকিল হবে। তাদের দাবী ঘাটগুলোর ডাইভারশন আরো দূর থেকে কেটে এনে সমতল করা দকার ছিল। তাহলে মাল ভর্তি ট্রাকগুলোর ফেরীতে ওঠা-নামা করা সহজ হতো।
দৌলতদিয়া ঘাটের যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রাখতে ২০১৭ সালে প্রায় ২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধানে ১ ও ২ নং ঘাট ২টি নতুন করে নির্মিত হয়। এরপর থেকে শুষ্ক মৌসুম এলে ঘাটগুলো পানি স্বল্পতার কারণে বন্ধ থাকলেও বর্ষার ভরা মৌসুমে ঘাটগুলো সচল থাকায় যানবাহন পারাপারে কার্যকর থাকে।
কিন্তু এ বছর অত্যধিক ভাঙনের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে শত চেষ্টা করেও ভাঙনের হাত থেকে ঘাট ২টি রক্ষা করতে পারেনি। অভিজ্ঞ মহল এর জন্য কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন। কারণ শুষ্ক মৌসুমে ঘাট এলাকায় ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নিয়ে ভরা বর্ষায় অপরিকল্পিতভাবে শুধু লক্ষ লক্ষ সরকারী টাকা ব্যয় করা হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না।
বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী কারিগর শহিদুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি ঘাটের কাজ ৭০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে মেসার্স ডালাস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। ঘাটগুলোর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো ইচ্ছা অনুযায়ী ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নাই। ইজিবির মাধ্যমে টেন্ডার করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে মাটির নীচে বাঁশের মাঁচা না দিলে গাড়ী উঠা-নামা করার সময় মাটির নীচে চাকা দেবে যাবে। তাই বাঁশের মাচা দেয়া হয়েছে।