॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে গতকাল ২৬শে নভেম্বর সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সেমিনারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান, রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন, টিআইবি-সনাকের সভাপতি প্রফেসর শংকর চন্দ্র সিনহা, রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছমির উদ্দিন এবং এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সেমিনার সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শরীফুল ইসলাম।
এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জনসাধারণের বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ প্রণয়ন করেছে। সেই আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভোক্তা ও বিক্রেতাদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে আজকে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। আমি আশা করি এই সেমিনারের মাধ্যমে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীগণ পণ্য ক্রয়-বিক্রয়সহ ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে আরো সচেতন হবেন। যারা ব্যবসা করেন তাদের অধিকাংশই সততার সাথে ব্যবসা করলেও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর অতি মুনাফা লোভী প্রবণতার কারণে প্রশাসনসহ ক্রেতাদের কাছে সকলের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো রাজবাড়ীতে যারা ভেজাল পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারিত করছে, ন্যায্য মূল্যের চেয়ে পণ্য বিক্রয়ে বেশী দাম রাখছে, মেয়াদোত্তীর্ণ বা পরিমাপে কারসাজির মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করছে তাদের চিহ্নিত করে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনা। আর এটি করতে পারলে ভবিষ্যতে ভোক্তার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা যারা পণ্য বিক্রিসহ জনসাধারণকে যে সেবা প্রদান করছি সে সম্পর্কে জনসাধারনের বোঝার জন্য মূল্য চার্টসহ সেবার কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে চার্টের মাধ্যমে প্রদর্শন করার কাজটি করছি না। যাতে ক্রেতা বা সেবা গ্রহীতা না জেনেই অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যে জিনিসটি বিক্রি করা হচ্ছে বা যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে তার মূল্য তালিকাসহ বিভিন্ন বিষয় চার্টে উল্লেখ করতে হবে। যদি সেটি না করা হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিস সম্পর্কে যে অভিযোগ আলোচনায় উত্থাপিত হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৫দিনের মধ্যে কী কী সেবা প্রদান করা হয় সে সমস্ত বিষয়সহ এই সেবা প্রদানে জনসাধারণকে কত সরকারী ফি জমা দিতে হবে তার যাবতীয় তথ্য সম্বলিত তালিকা টানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে জেলাবাসী সকল সরকারী-সুবিধা ও এর সম্পর্কিত সরকার নির্ধারিত আর্থিক বিষয় সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারী অফিসের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের প্রদত্ত সেবা কার্যক্রম চার্টের মাধ্যমে প্রদর্শন করবেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের সকলের জানা রাজবাড়ীতে কিছু দিন আগে লবণ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ক্রেতা ও বিক্রেতা গুজব ছড়িয়ে লবণের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের লাভবান হওয়াসহ বাজারে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আর সেই গুজবে কান দিয়ে অনেক ক্রেতা ও দোকানী ৩২ টাকা টাকার লবণ ৬০ টাকায় কেনা-বেচা করেছে। যা খবই দুঃখজনক। কোনভাবেই কারসাজী বা গুজবে পণ্যের দাম বাড়ানো যাবে না। যদি ভবিষ্যতে রাজবাড়ীতে কেউ কারসাজির মাধ্যমে বা গুজব ছড়িয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের অন্য জেলার তুলনায় আমরা রাজবাড়ীবাসী বর্তমানে সর্বদিক দিয়ে অনেক ভালো আছি এবং ভবিষ্যতেও আমার ভালো থাকতে চাই। আর ভালো থাকার জন্য আমরা সকলে জেলার তথা দেশের উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করবো।
এছাড়াও সেমিনারে ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোক্তা সংরক্ষণ আইন সম্পর্র্কে জেলাবাসীকে আরো সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।