॥সোহেল মিয়া॥ ওহিদুল মন্ডল(৪৫) বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ একজন মানুষ। নিজের কোন জমিজমা নেই। অন্যের জমি চাষ করে সংসার চালাতে হয় তাকে। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও তার মনে সবসময় রয়েছে আনন্দ। সারা দিনের হাড়খাটুনি পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় তিনি মানুষকে বিনোদন দেয়ার জন্য পাতার তৈরী বাঁশি বাজান। মানুষকে আনন্দ দিতে তার ভালো লাগে। বিভিন্ন গাছের পাতা দিয়ে তৈরী বাঁশি বাজিয়ে তিনি অসংখ্য মানুষের মন জয় করেছেন।
মধুপুর গ্রামের মৃত ইশারত মন্ডলের ছেলে ওহিদুল মন্ডল এভাবে গত ৩০ বছর যাবৎ পাতার তৈরী বাঁশি বাজিয়ে আসছেন। তার বাঁশির বেশীরভাগ ¯্রােতাই গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক। তাদেরকে একটু বিনোদন দেওয়ার জন্যই তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বাঁশি বাজানোর আসর বসান। বাঁশিতে পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, লালনসহ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের গানের সুর তোলেন তিনি।
ইলিশকোল গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে ওহিদুলকে পাতার তৈরী বাঁশি বাজাতে দেখছি। দারিদ্রতা ও দুখ-কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করলেও তার আনন্দের কোন কমতি নেই। সন্ধ্যা হলেই সে কোন একটি জায়গায় বসে পাতা দিয়ে বাঁশি বাজায়। এভাবে পাতা দিয়ে বাঁশি বাজাতে পারাটাও একধরনের প্রতিভা।
বালিয়াকান্দির নির্মল সাংস্কৃতিক একাডেমীর অধ্যক্ষ উত্তম কুমার গোস্বামী বলেন, বাঁশি বাজানো আমাদের গ্রাম-বাংলার একটি ঐতিহ্য। বর্তমানে বাঁশি বাজানোর সেই সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। ওহিদুল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে ধারণ করছেন। শিল্পী সত্ত্বার এমন বহিঃপ্রকাশ গ্রাম-বাংলাতেই সম্ভব। ওহিদুল একজন প্রতিভাবান বংশীবাদক।
ওহিদুল মন্ডল বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি চাচাতো ভাই বাঁশি বাজাতো। তার বাজানো দেখে আমিও বাঁশি বাজাতে উৎসাহিত হই। ৩০ বছর ধরে আমি পাতা দিয়ে তৈরী বাঁশি বাজিয়ে আসছি। গ্রামের কৃষকরা সারাদিন মাঠে কাজ করে এসে ক্লান্ত হয়ে যায়। তাদের বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তাই তাদেরকে একটু আনন্দ দেয়ার জন্যই আমি পাতার বাঁশি বাজাই।