॥স্টাফ রিপোর্টার॥ নাব্যতা সংকটের কারণে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে আটকে রয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌপথের বিভিন্ন এলাকায় ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় পণ্যবাহি কার্গো সরাসরি বাঘাবাড়ি পৌছতে পারছেনা। পাথর, কয়লা, গম, সারসহ বিভিন্ন পন্য জাহাজে করে চট্টগ্রাম ও মোংলা নদী বন্দরে আসছে। কিছু পণ্য এখান থেকে খালাসের পর চলাচলের উপযোগী করে তবে বাঘাবাড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে এসব জাহাজ আটকে থাকছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয় জানায়, চট্টগ্রাম বা মোংলা থেকে আসা এসব পন্য বাঘাবাড়ি পৌছতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫দিন। নৌপথের ৬/৭টি স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠায় সরাসরি যেতে না পেরে তিন দিনে দৌলতদিয়ায় পৌছে পন্য খালাসের জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যে কারণে এসব পন্য বাঘাবাড়ি পৌছতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়ার ৬নম্বর ফেরী ঘাটের অদূরে বাহির চরে নোঙ্গর করে রয়েছে ৩৫টির মতো কার্গো-জাহাজ। জাহাজ মাষ্টার, ড্রাইভার, সুকানিসহ অন্যান্য ষ্টাফ ঘোরাফেরা করছে। এসব কার্গোতে পাথর, কয়লা সার ও গম রয়েছে। ১৫০ জনের মতো শ্রমিক জাহাজ থেকে এসব পন্য বলগেটে খালাসের কাজ করছে। পাথর ও কয়লা দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আমদানি করা। পাথর ও কয়লা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাবনার নগরবাড়ি যাবে। সেখান থেকে ঈশ^রদী হয়ে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাবে। সার ও গমও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা বলে সংশ্লিষ্ট লোকজন জানায়।
এ সময় এমভি সামিন-সোহেল-১, এমভি সোবহান-১, এমভি সোনিয়া-৭, এমভি প্রিন্স মেম, এমভি সনজিদ, এমভি সাদি বেঙ্গল, এমভি গোল্ডেন রোজ, এমভি কুইন অব ফিরোজা-২, এমভি মশিউর সামিয়া, এমভি নুসরাত ইসলাম, এমভি আরাফাত ময়দান, এমভি সাহারাস্তি-২, এমভি আনিকা সামিহা, এমভি ওয়াফি, এমভি খিজির তরী, এমভি প্রিন্স অব সোবহান, এমভি নাফিজ-২, এমভি আসাদ-১, এমভি আনিশা, এমভি গ্লোবালিজ-২, এমভি সামিরা গোলাপ, এম,ভি ওয়ারিশা আহনা, এমভি সুলতানা মান্নানসহ ৩৫টির মতো কার্গো নদীতে ভাসতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ ধরে অধিকাংশ জাহাজ এখানেই অপেক্ষা করছে।
এমভি প্রিন্সেস মীম এর মাষ্টার আব্দুল হান্নান বলেন, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১১০০টন পাথর নিয়ে পাবনার নগরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে গত ১৫ই নভেম্বর দৌলতদিয়ায় এসে আটকে আছি। এখান থেকে কমপক্ষে ১৫০টন পাথর নামানোর পর যেতে পারবো। গত শুক্রবার দুপুরে পাথর খালাসের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এখনো আরো দুইদিন থাকতে হবে।
দৌলতদিয়া ঘাটে শ্রমিক জোগানের দায়িত্বে থাকা মের্সাস আরিফ ট্রান্সপোর্টের কমিশন এজেন্ট এর ব্যবস্থাপক মনির উদ্দিন সরদার বলেন, ১৫০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছে। অধিকাংশ শ্রমিক নগরবাড়ি থেকে এসেছে। নাব্যতা স্বল্পতার কারণে এক সপ্তাহ ধরে এখানে জাহাজ ভিড়ছে। শ্রমিক সংকট থাকায় ১৯শে নভেম্বর থেকে পন্য খালাস শুরু হয়েছে। প্রতি বস্তা মাল থেকে ট্রান্সপোর্টকে ৩টাকা করে দেয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের দিতে হয় বস্তা প্রতি ২.৬০টাকা।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের যুগ্ম-পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ির নৌপথের ৬/৭টি স্থানে ডুবোচর ওঠায় সরাসরি জাহাজ যেতে পারছেনা। এসব স্থানে বর্তমানের পানির গভীরতা রয়েছে ৭/৮ফুট। পন্যবাহি জাহাজ চলাচলের জন্য প্রয়োজন ১১ফুট। নাব্যতা দূর করতে ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব দুটি ড্রেজার(খননযন্ত্র) আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে খনন করে ২ফুট করে গভীরতা বাড়লে ও কিছু পন্য খালাসের পর ৯ফুট করে পানি পেলে জাহাজ যেতে পারবে।