॥স্টাফ রিপোর্টার॥ পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ থাকা সত্বেও একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে লবণের প্রাপ্যতা নিয়েও গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। লবণ নিয়ে ছড়ানো গুজবে বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জেলায় বাজার তদারকিতে নেমেছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা।
গতকাল ১৯শে নভেম্বর দুপুরের পর রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, জেলা ও থানা পুলিশের কর্মকর্তাগণ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম বিভিন্ন বাজার তদারকিতে নামেন।
এ সময় তারা রাজবাড়ী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে লবণের পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে গিয়ে দাম যাচাই করেন এবং প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তাদেরকে সতর্ক করে দেন।
গুজব শুনে রাজবাড়ী বাজারে তড়িঘড়ি করে লবণ কিনতে আসা দেলোয়ার হোসেন খান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি বাজারে এসে মূল্য বৃদ্ধির গুজবের কোন সত্যতা পাইনি। প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যেই এক কেজি লবণ কিনেছি।’
অশোক সাহা নামে বাজারের একজন মুদী দোকানী বলেন, বাজারে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কীভাবে যে মূল্য বৃদ্ধির গুজব ছড়ালো জানি না। প্রশাসনের লোকজন এসে বিষয়টি তদারকি করে গেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজবাড়ী বাজারে তদারকি অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কামরুল হাসান বলেন, লবণের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তার কোন ভিত্তি নাই। তা সত্ত্বেও বাজারের পাইকারী ও খুচরা লবণ বিক্রির দোকানগুলোতে গিয়ে বিষয়টি মনিটরিং করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। কেউ অস্বাভাবিক পরিমাণ লবণ চাইলে তার কাছে বিক্রি করতে নিষেধ করেছি। এর পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা তথ্য অফিসের মাইকিংয়ের মাধ্যমে গুজবের বিষয়টি প্রচার করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে প্রশাসনের তৎপরতা সত্ত্বেও গুজব শুনে অনেক মানুষ বাজারে এসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ কিনে নিয়ে গেছে। অনেকে ৫/১০ কেজি করেও কিনছে। সরেজমিনে রাজবাড়ী সদরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে খুচরা লবণ বিক্রির দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে।
অপরদিকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে লবণ বিক্রির দায়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাঈদুজ্জামান খান গতকাল ১৯শে নভেম্বর সন্ধ্যায় পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ভান্ডারিয়া বাজারের এক মুদী দোকানীকে ৫হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এদিকে লবণের মূল্য বৃদ্ধির গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজবাড়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ শরীফ-উজ-জামানের নেতৃত্বে রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার ও ডিবি’র ওসি ওমর শরীফসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম গতকাল ১৯শে নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে রাজবাড়ী বাজারসহ সদর উপজেলার হাট-বাজারে তদারকি অভিযান চালায়।
অভিযানকালে পুলিশ দল রাজবাড়ী বাজারস্থ কনফিডেন্স কোম্পানীর লবণের ডিলার হাজী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাগর ট্রেডার্স এবং শহরের স্টেডিয়াম এলাকাস্থ এসিআই লবণ কোম্পানীর ডিলার অপূর্ব সাহার গোডাউনে লবণের মজুদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাদের গুদাম পুলিশী নজরদারীতে রেখেছে।
এছাড়াও পুলিশের তদারকি অভিযানকালে অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রির দায়ে সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের সিঙ্গা বাজার থেকে ৩জন খুচরা লবণ বিক্রেতাকে আটক করা হয়। তাদেরকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাঈদুজ্জামান খান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা করেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা ঃ পেঁয়াজ ও লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান গতকাল ১৯শে নভেম্বর বিকেলে বালিয়াকান্দি বাজারের বিভিন্ন দোকান মনিটরিং করেন।
তিনি ‘প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে’ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মূল্যে লবণ ও পেঁয়াজ বিক্রির ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। এ সময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা(অঃ দাঃ) রবিউল হক, একাডেমিক সুপারভাইজার মিয়াদ হোসেন, আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী বিধান কুমার বিশ্বাস এবং বালিয়াকান্দি বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জেলা তথ্য অফিস ও জেলা পুলিশসহ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে লবণের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির গুজব বিরোধী সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়।