॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১১ই নভেম্বর সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ফজলুল করিম, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ শরিফুল ইসলাম, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরে সফুরা ফেরদৌস, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শামছুন্নাহার চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন খান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শরীফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সফি, ডাঃ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। গত কয়েক দিন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে জেলাবাসী অনেক আতঙ্কে ছিল। তবে ঘূর্র্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে চলেও যাওয়ায় রাজবাড়ীতে এর কোন প্রভাব বা ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ কমিটি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে যেসব সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেটা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। সেগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে যেসব বিভাগের অভিযান পরিচালনার কথা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা কোন অভিযান পরিচালনা করছে না। ভবিষ্যতে অবশ্যই চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। রাজবাড়ী রেলওয়ে পুলিশের যে পরিমাণ অভিযান হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে না। আমি আশা করি তারা আরো বেশী উদ্যোগী হয়ে ভবিষ্যতে মাদক ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাবের বক্তব্য অনুযায়ী রাজবাড়ী শহরের লোকোশেড এলাকার মাদক কারবারীরা পুনরায় মাদক ব্যবসা করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য অনুযায়ী রাজবাড়ী পৌরসভার মধ্যে যেসকল ইজিবাইক চলাচল করছে তাদের সঠিক সংখ্যা ও কারা চালাচ্ছে তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সকলের জানা সরকার ২০২০ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং দেশব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করবে। যার আনুষ্ঠানমালা আগামী ৮ই ডিসেম্বর ডিজিটাল বোর্ডে কাউন্টডাউনের (দিন গণনা) মাধ্যমে শুরু করা হবে। যেহেতু ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস এবং সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী সেহেতু এই সময় জঙ্গী গোষ্ঠীসহ সরকার বিরোধীরা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোসহ জেলাবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। কারো সম্পর্কে নাশকতার বিষয়ে কোন সন্দেহ হলে সাথে সাথে বিষয়টি জেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট থানা, পুলিশ বিভাগসহ জনপ্রতিনিধিদের জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। যাতে এর বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। আমি বিশ্বাস করি জেলাবাসী যদি মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহসহ আইনÑশৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে এমন বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তথ্য প্রদান ও তাদের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করে তবে জেলা থেকে অনেক কিছু নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সে জন্য তিনি সকলকে আরো বেশী সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়াও সভায় রাজবাড়ী রেলগেটের যানজট, সুইমিং পুলের রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতাল সড়কে স্কুল টাইমে ট্রাক চলাচল, পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ, শিশু পার্ক, ভ্রাম্যমাণ অস্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান, চোরাচালান, মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহসহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা শেষে একই স্থানে জেলা সন্ত্রাস-নাশকতা প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, বাল্য বিবাহ কমিটি, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের ডাটাবেজ তৈরী এবং কারাগারে থাকা শিশু-কিশোরদের অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।