॥চঞ্চল সরদার॥ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন গতকাল ৮ই নভেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এরপর বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সম্মেলনে মিলিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত। প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ডি.এন চ্যাটার্জী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব কুমার দে, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর হালদার, রাজবাড়ী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কর্মকার ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি এডঃ খান মোঃ জহুরুল হক বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ পারিজাত কুমার পাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্ত।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার দাসের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে। তাদেরকে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। জামাত-বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের কাছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা জিম্মি। তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভোলা, নাসিরনগর, রামুসহ কয়েকটি জায়গায় যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার পিছনে বড় ধরণের ষড়যন্ত্র ছিল। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি রক্ষার মাধ্যমে দেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাইকে একসাথে থাকতে হবে। যারা সাহসিকতার সাথে কাজ করতে পারবে তাদেরকেই পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃত্বে আনতে হবে। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে আছি। রাজবাড়ীতে হিন্দুদের উপর কোন ধরনের ষড়যন্ত্র বা হামলা হলে আমরা রুখে দাঁড়াবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী বলেন, ধর্মের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করা যাবে না। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন তখন দেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একযোগে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। জামাত-বিএনপি দেশের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরী করছে। তাদের ব্যাপারে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সকলে যার যার ধর্ম পালন করবে। অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, এ দেশের সংখ্যালঘুরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হচ্ছে। বর্তমানে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে হিন্দুরা যেভাবে শান্তিতে আছে বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ততটা শান্তিতে ছিল না। নিজেদের অধিকার আদায়ে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংগঠনের নেতা হলে তাকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা চাইবো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছে, থাকুক। আমরা হিন্দুরা শান্তিতে আছি, শান্তিতে থাকতে চাই।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনার মাধ্যমে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তকে সভাপতি এবং সদর উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি গণেশ মিত্রকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে জেলা শাখার ৯১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।